চিকিৎসকদের অম্লমধুর ঈদ উদযাপন

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনা মহামারীর মধ্যেই পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আমেজে মেতেছে সবাই। সকল আপদ ভুলে পরিবারের সঙ্গে সময় পার করছেন। তবে কিছু মানুষ জীবন বাঁচাতে রয়ে গেছেন কর্মস্থলে; তারা চিকিৎসক। চিকিৎসাই যাদের পরম ধর্ম। এই সংকটকালে প্রাণ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস।

ছয় বছর বয়সী নাজমুস সাকিব। বাবা-মা দুই জনই চিকিৎসক। মা ঢাকার একটি হাসপাতালে কর্মরত হলেও বাবা রয়েছেন উত্তরের জেলা নীলফামারিতে। বাবা-মাকে ছাড়া সাকিবের ঈদ চলছে।  মামা-মামি, চাচা-চাচি, দাদা-দাদিসহ সবাই পছন্দের উপহার দিয়েছে। এত উপহারের মাঝেও কোথায় যেন একটু কমতি কারন, মাম্মিটা সঙ্গে নেই, নেই বাবাও। ওর একটাই ভাবনা এই খুশির দিনেও বাবা-মা'ক পাশে পেল না।   ছোট্ট ছেলেটি জানে না তারা দেশের মানুষের জন্য আজ নেই পাশে। 

সাকিবের বাবা-মায়ের মতো হাজারো বাবা-মা মানুষকে সেবা দিতে প্রিয়জনকে ছেড়ে দূরে। কাজের ফাঁকে কখন যে চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে যায়, ঠিক খেয়াল হয় না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ঈদে প্রায় চল্লিশ শতাংশের বেশি চিকিৎসক কর্মস্থলে সেবা দেন। তবে কভিড-১৯ মহামারীর জন্য এবার কোন কোন চিকিৎসকই ছুটি পাননি। সবাই রয়েছেন কর্মস্থলে। 

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. রাশেদ আহমেদ কর্মস্থলে রয়েছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে বেলা ১১ টার দিকে কথা হলে তিনি তখন রোগী দেখছিলেন। হাসি দিয়েই জানালেন, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াই তার প্রথম কাজ। এতে তিনি সত্যিকার জীবনের আনন্দ পান। ঢাকাস্থ পরিবারের কাছে নেই তিনি। আনন্দ-বেদনার মিশেলে তিনি বলেন, 'পরিবারের সঙ্গে থাকতে না পারার কষ্ট আবার রোগীর সেবা দেওয়ার আনন্দ। এ এক অম্লমধুর অনুভূতি। সব চিকিৎসক রোগীদের জন্য সবোর্চ্চটুকু চেষ্টা করেন। কমতি রাখেন না।'

করোনা মহামারীতে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে রোগীর সংখ্যা কমেছে।  মৃত্যুহারও কমেছে, তবে শঙ্কা কাটেনি। আগের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঈদের দিনেও হাসপাতালে আসছেন করোনা রোগী। 

সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় অন্য  দিনের মত একটা দিন। এসময় কথা হয় নার্স আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'মহামারীর আগে আমরা ডিউটি ভাগ করে নিতাম। বেশির ভাগ ঈদে অমুসলিমরা দায়িত্বে থাকতেন। কিন্তু মহামারীতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এখন এই ক্রান্তিলগ্নে আমার বাড়ি যাই কি করে।' 

পরিবারের সঙ্গে ঈদের খুশিটা পেলেন না এতে খুব কষ্ট হয় কিনা জনতে চাইলে চোখ মুছেন তিনি। বলেন, 'এখানে এই দিনে যারা আসেন তারা কেউ বিপদে না পড়লে আসতে চান না। তাদের কষ্ট ভাবলে নিজের জন্য কষ্ট হয় না।' কোন জরুরি ডাকে সাড়া দিতে ছুটলেন তিনি। চোখের সামনে করিডোর দিয়ে ছুটে গেলেন রোগী সামলাতে।   

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বণিক বার্তাকে বলেন, 'দেশে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ ছুটি পাননি। আমাদের চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্টাফরা কাজ করছেন। তাদের প্রতি আমরা ঋণী। পিপিই পড়ে এখন যে চিকিৎসকরা কাজ করছেন তাদের ঋণ কখনও শোধ হবে না। এই কষ্ট দাম দিয়ে কেনা যায় না। তারপরও আমরা চাই সকলে চিকিৎসা পাক। আমাদের সেবা থেকে কেউ বঞ্চিত না হোক।'


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন