ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সহিংসতা

হামাস আসলেই কতটা শক্তিশালী

শিহাবুল ইসলাম

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল। একদিকে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং অন্যদিকে পাল্টা হামলা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছুড়ছে ফিলিস্তিন। এ সহিংসতায় দুই পক্ষের অন্তত ৭৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬৭ ফিলিস্তিনি এবং ৭ জন ইসরায়েলি নাগরিক। মৃত্যুর হিসাবের মতোই দুই পক্ষের অসম সামরিক শক্তি নিয়ে চলছে এ লড়াই। 

সামরিক দিক থেকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বিশে^র অন্যতম শক্তিশালী। বিমান বাহিনী, সশস্ত্র ড্রোন ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মতো ব্যবস্থাগুলো তাদের গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে ইচ্ছামতো আক্রমণ সক্ষম করে তোলে। বিমান হামলার লক্ষ্য সম্পর্কে তারা বার বার এমন কথায় বলেছে। তাদের ভাষ্য, তারা কেবল সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সাইটগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ঘনত্ব এবং হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর বসবাস খুব কাছাকাছি এবং প্রায়শই তারা লুকিয়ে থাকে। তাই ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে হামলা করে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত এড়ানো একাবারেই অসম্ভব। 

দুর্বল হলেও ইসরায়েলে আক্রমণ করার জন্য হামাস ও অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীর কাছে যথেষ্ট অস্ত্র রয়েছে। এছাড়া তারা হামলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এ সহিংসতার মধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি সশস্ত্র ড্রোনকে গুলি করে নামিয়েছে। ড্রোনটি গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। সুতরাং হামাসের হাতে সশস্ত্র ড্রোন থাকার সম্ভবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। 

ইসরায়েলের একজন সামরিক মুখপাত্র বলেন, একটি অভিজাত হামাস ইউনিট দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। ইসরায়েলে সেনাবাহিনী আগাম খবর পাওয়ায় সুড়ঙ্গটি ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। 

এগুলোর বাইরে ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র। স্থল থেকে স্থলে আঘাত হানতে সক্ষম বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে হামাসের। সম্প্রতি ব্যবহার করা কর্নেট গাউডেড অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তারা মিশরের সিনাই উপদ্বীপ থেকে টানেলের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ অস্ত্রই গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে হামাস ও অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীর অস্ত্রাগারে তৈরি হয়। 

ইসরায়েলি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিশ^াস করেন, ইরান এ শিল্প গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসরায়েলের বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্যও ছিল এ অস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের স্থানগুলো। 

হামসও অস্ত্রগুলো খুব গোপনীয়তার সঙ্গে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে। এজন্য তাদের কাছে আসলে কি পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে- তা অনুমান করা অসম্ভব। তবে সহজেই অনুমান করা যায় তাদের অস্ত্রাগারে বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার অস্ত্র রয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিজস্ব অনুমান থাকলেও, তারা সেটি প্রকাশ করতে রাজি নয়। তাদের সব মুখপাত্রই বলবেন যে, তারা বিশ^াস করেন হামাসের দীর্ঘ সময়ে ধরে এ ধরনের হামলা বজায় রাখার সামর্থ আছে। 

ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। তবে এগুলোর মধ্যে কোনটিই বেসিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নতুন বলে মনে হয় না। তবে তারা সেগুলোর ব্যপ্তি বৃদ্ধি এবং আরো বেশি বিস্ফোরক বহনযোগ্য করে তুলতে চেষ্টা করছে। 

কাসাম (১০ কিলোমিটার) ও কুদস ১০১ (১৬ কিলোমিটার) এর মতো স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বিশাল মজুদ রয়েছে হামাসের। এছাড়া রয়েছে গ্রেড সিস্টেম (৫৫ কিলোমিটার) এবং সেজিলের (৫৫ কিলোমিটার) মতো ক্ষেপণাস্ত্রও। হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা বেশিরভাগই এই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। মর্টার ফায়ারের মাধ্যমে এগুলো শক্তিশালী করা যায়। 

এগুলোর পাশাপাশি হামাস এম-৫৫ (৭৫ কিলোমিটার), ফজর (১০০ কিলোমিটার), আর-১৬০ (১২০ কিলোমিটার) এর মতো বিভিন্ন ধরনের দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাগুলোও পরিচালনা করে। কিছু কিছু এম-৩০২ এস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যপ্তি ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে হামাসের কাছে এমন অস্ত্র রয়েছে, যা জেরুজালেম এবং তেল আবিব উভয়কেই লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। এছাড়া হামাসের এ ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে পুরো উপকূলজুড়ে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ ঘনত্বপূর্ণ জনসংখ্যা এবং সমালোচনামূলক অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। 

ইসরায়েলি সেনাবহিনীর দাবি, গত তিন দিনে ইসরায়েলে হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে এবং এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে ২০০টি গাজা উপত্যকাতেই পড়েছে। 

সেনাবাহিনী আরো বলেছে, ইসরায়েলে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ৯০ শতাংশই আইরন ডোম অ্যান্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে একপর্যায়ে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রতিরোধী ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু মিসাইল প্রতিরোধ করা যায়নি। তার মানে এ নয় যে আমাদের প্রতিরোধী ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। 

বিবিসি অবলম্বনে শিহাবুল ইসলাম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন