কভিড সংকটের মধ্যেই ক্ষমতার পালাবদল নেপালে

বণিক বার্তা অনলাইন

কভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঝড়ের মধ্যে পড়েছে হিমালয়কন্যা নেপাল। সংক্রমণ প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। করোনার ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে দেশটি। গত সোমবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি আস্থা ভোটে হেরে গেছেন। ওইদিনই প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি নতুন একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন। খবর সিএনএন। 

কভিড-১৯ নিরাময়ে অপ্রমাণিত পরামর্শ দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলি। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের মধ্যেও তিনি জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপরই আস্থার সংকটে পড়ে অলি সরকার। আস্থাভোটে হেরে যাওয়ার পর তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এক মাস আগেও ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশটিতে দিনে ১০০ এর মতো কভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হতো। এরপর গত মঙ্গলবার দেশটিতে ৯ হাজারেরও বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। নেপালের এ প্রাদুর্ভাবকে অনেক বিশেষজ্ঞ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে মিলিয়েছেন। দীর্ঘ ও উন্মুক্ত সীমানা থাকা দেশ দুটি মধ্যে সহজেই যাতায়াত করা যায়। 

ভারতে সারি সারি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং হাসপাতালের বাইরে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যগুলো নেপালে প্রতিলিপি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট প্রকট হচ্ছে এবং হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই দিতে না পেরে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীদের। 

সমালোচকরা বলছেন, জনগণের আত্মতুষ্টি এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা সম্ভবত নেপালের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে আরো খারাপ করেছে। দ্বিতীয় ঝড় রোধ করা সম্ভব না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নিয়ন্ত্রণে সরকার আরো কিছু করতে পারতো। 

নতুন এ সংকট জোরালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের মূল জোটের শরিক নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) সমর্থন প্রত্যাহার করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হরিয়েছিল অলির সরকার। এ কারণে অলিকে সংসদের নিম্নকক্ষে আস্থা ভোটে যেতে হয়েছে। এই হেরে যাওয়ার ফলে তার বছর তিনেকের সরকারের পতন হয়। 

গত মাসের শুরুতে হিমালয়ের দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। সরকারের ধীর পদক্ষেপের কারণে বিপুল জনসমাগমে ধর্মীয় উৎসব, বিবাহ ও অন্যান্য জনসমাগম অব্যাহত ছিল। প্রতিদিনের সংক্রমণ তিনগুণ বেড়ে যাওয়ার পর ৮ এপ্রিল অলি বলেছিলেন, কভিড-১৯ পেয়ারা পাতা দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এর আগে গতবছর সংক্রমণের সময়ও তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন মশলা খাওয়ার কারণে নেপালিরা আরো শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়েছিল। 

দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৫ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছার পর গত ২৯ এপ্রিল সরকার রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুই সপ্তাহের লকডাউন আরো করে। এরপর মে মাসে কর্তৃপক্ষ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, দেশের বাইরে থেকে অক্সিজেনের অর্ডার করে, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বর্ধিত করে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল নিষিদ্ধ করে। তবে এমন বিধিনিষেধগুলো যখন কার্যকর করা হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। 

যদিও পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিছু ব্যাপারে সরকারের ভুলের বিষয়টি স্বীকার করেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে বড় বড় অনুষ্ঠানের বিষয়ে অলি স্বীকার করেছেন, কিছু ভুল হয়েছে। তবে তিনি এটাও বলেন, এটি রাজনৈতিক বিষয় হওয়া উচিত নয়। তার দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। 

স্বেচ্ছাসেবক দল কভিড কানেক্ট নেপালের সুরজ রাজ পান্ডে বলেন, লোকেরা হাসপাতালে বেড পাচ্ছে না, অক্সিজেনের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে এবং সহায়তার জন্য লোকেরা চিৎকার করছে। অথচ দেশের প্রধান (প্রধানমন্ত্রী অলি) বলেছিলেন, হ্যাঁ সবকিছু ঠিকঠাক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণে। যেখানে রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন