পুরনো চালের দাম স্থির

নতুন মৌসুমের চালে বড় দরপতন

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

টানা কয়েক মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর অবশেষে কমতে শুরু করেছে চালের বাজারদর। তবে নতুন করে বাজারে ওঠা বোরো মৌসুমের চালের দাম কমলেও পুরনো চালের বাজারদর অপরিবর্তনশীল রয়েছে। এরই মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন চালের বস্তাপ্রতি দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

জানা যায়, ১০ দিন ধরে দেশের বাজারে নতুন মৌসুমের চাল আসছে। এর আগে দেশে চালের দরবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি শুরু হয়। এতে ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু বৈশ্বিক দরবৃদ্ধির কারণে চালের দাম আবারো বেড়ে যায়। নিয়ে টানা পাঁচ-ছয় মাস চালের বাজার অস্থির ছিল। কিন্তু সর্বশেষ বোরো মৌসুমের ধান কাটার শেষ পর্যায়ে বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করলে বাজার নিম্নমুখী হতে থাকে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন চাল সরবরাহ শুরু হওয়ায় দাম কমছে। তবে এক বছর ধরে দেশে চালের বাজারদার অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নতুন মৌসুমের চালেও ভালো লাভ করছেন কৃষক ব্যবসায়ীরা।

সরকারিভাবে আমদানির সুযোগ বাড়ানো এবং শুল্ক কমানো ছাড়াও দেশব্যাপী ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে নতুন মৌসুমের চালের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমলেও পুরনো চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ চাক্তাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে নতুন আসা স্বর্ণা সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) হাজার ১০০ টাকায়। যদিও একই জাতের পুরনো চাল বিক্রি হচ্ছে হাজার ২৫০ টাকায়। এছাড়া পুরনো গুটি সেদ্ধ চাল হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও নতুন গুটি সেদ্ধ বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। এদিকে মোটা জাতের সেদ্ধ চাল হাজার ৮০০ টাকায় (পুরনো হাজার ৯০০ টাকা), মিনিকেট সেদ্ধ চাল হাজার ৪০০ (পুরনো হাজার ৬০০), পারি সেদ্ধ চাল হাজার ৩০০ (পুরনো হাজার ৫৫০), জিরাশাইল হাজার ৭৫০ (পুরনো হাজার ৫০ টাকা) নাজিরশাইল হাজার ৮০০ টাকায় (পুরনো হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে আতপ চালের মধ্যে নতুন আসা বেতি চাল বিক্রি হচ্ছে হাজার ৩০০ টাকায়। পুরনো বেতি বিক্রি হচ্ছে হাজার ৭০০ টাকায়। মোটা আতপ (ইরি) বিক্রি হচ্ছে হাজার ৭০০ টাকায়। পুরনো মোটা আতপ হাাজর ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন আতপ পাইজাম হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও পুরনো আতপ পাইজাম হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি আতপের নতুন চাল হাজার পুরনো চাল হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, বোরো উত্তোলন শুরু হলে দেশে পাইকারি বাজার মোকামগুলোতে চালের দাম কমতে শুরু করে। তবে ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ঈদ উপলক্ষে স্থলবন্দরগুলো আগামী দুই সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করায় নতুন মৌসুমের চালের দাম আপাতত আর কমছে না বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স মামুন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী নান্টু রায় বণিক বার্তাকে বলেন, বোরো মৌসুমের চালের সরবরাহ আসায় বাজারে দাম কমেছে। তবে নতুন চালের দাম কমলেও পুরনো চালের দাম আগের মতোই স্থির রয়েছে। দেশীয় চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ছাড়াও আমদানীকৃত চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আগামীতে চালের বাজারদর ধারাবাহিকভাবে আরো কমবে।

সরকার চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ছয লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সেদ্ধ চালসহ মোট সাড়ে ১৬ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মে খাদ্য মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে আগামী আগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এজন্য মের মধ্যে মিলারদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ, জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ শতাংশ আগস্টের মধ্যে অবশিষ্ট ১০ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আবেদন পাওয়া না গেলে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা দরবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে আমদানি প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল আমদানি হয়নি। এতে শুল্ক কমানোর সুবিধার পরও দেশের চালের বাজারদর ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বোরো মৌসুমে দেশীয় চাল ওঠায় বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পাইকারি চাল ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বণিক বার্তাকে বলেন, লকডাউন ঘোষণার পর থেকে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। তবে বোরো ধানের ফলন আসার পরই দাম কমতে শুরু করেছে। যদিও পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন