শিল্প অধ্যুষিত ছয় এলাকা

বেতন হয়নি ৫৭১ কারখানায় ৬৫১টিতে বোনাস

বদরুল আলম

ঈদের আগে বরাবরই বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার কারখানাগুলোয়। এবারো ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলাচলের ওপর সরকারের দেয়া বিধিনিষেধের মধ্যে কর্মীদের ছুটির বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে শিল্প এলাকাগুলোয়। তবে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে। ছয় শিল্প এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত বেতন পরিশোধ হয়নি ৫৭১টি কারখানায়। আর ৬৫১টি কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস অপরিশোধিত রয়েছে।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ খুলনা ছয়টি এলাকা শ্রমঘন বলে বিবেচিত, যার আইন-শৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বে আছে শিল্প পুলিশ। সংস্থাটির তথ্যমতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে হাজার ৯৮২টি।

তথ্যমতে, ছয় শিল্প এলাকায় ৪০-৪১ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন খাতের কারখানাগুলোয় কাজ করছেন। শিল্প কেন্দ্রীভবনের কারণেই ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। ফলে বস্ত্র পোশাক খাতের কারখানার আধিক্য আছে। বেতন-বোনাস পরিশোধের চিত্রেও কেন্দ্রীভবনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

শিল্প এলাকাগুলোয় পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা আছে হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে বেতন অপরিশোধিত থাকা কারখানার সংখ্যা ১৮০ বা ১১ শতাংশ। বিজিএমইএর বোনাস অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ১২০ বা শতাংশ। আরেক সংগঠন বিকেএমইএর কারখানা ৮১৬টি। এর মধ্যে বেতন অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৬১ বা শতাংশ। আর বোনাস অপরিশোধিত কারখানা ৪৮টি বা শতাংশ।

পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প বস্ত্র খাতের মালিক সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য কারখানা ছয় শিল্প এলাকায় ৩১০টি। এর মধ্যে বেতন অপরিশোধিত কারখানা ৩৪ বা ১১ শতাংশ। বোনাস অপরিশোধিত কারখানা ২৮টি বা শতাংশ।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানা ছয় শিল্প এলাকায় ৩৬৯টি। এর মধ্যে বেতন অপরিশোধিত কারখানা ১৫টি বা শতাংশ। বোনাস অপরিশোধিত কারখানা ১৯টি বা শতাংশ। ছয় শিল্প এলাকায় অন্যান্য খাতের মোট কারখানা হাজার ৭৫৪টি। এর মধ্যে বেতন অপরিশোধিত কারখানা ২৮১টি বা শতাংশ। বোনাস অপরিশোধিত কারখানা ৪৩৬টি বা শতাংশ।

পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী সংগঠনটির চলমান কারখানা সংখ্যা হাজার ৯১৩। এর মধ্যে ঢাকায় কারখানার সংখ্যা হাজার ৬৬৭, চট্টগ্রামে ২৪৬টি। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫টি কারখানার বেতন আটটি কারখানার বোনাস আজ পরিশোধ হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রামেও ৩২টি কারখানায় বেতন ২৩টি কারখানায় বোনাস আজ পরিশোধ হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজিএমইএ বলছে, গতকাল পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে এমন কারখানা ঢাকায় হাজার ৬৫২টি চট্টগ্রামে ২১৪টি। অর্থাৎ মোট হাজার ৮৬৬টি বা ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ কারখানায় গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ হয়েছে। বোনাস পরিশোধ হওয়া কারখানা ঢাকায় হাজার ৬৫৯টি, চট্টগ্রামে ২২৩টি। হিসেবে বোনাস পরিশোধ হয়েছে হাজার ৮৮২টি বা ৯৯ শতাংশ কারখানায়।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি সংগঠনের নিবিড় নজরদারি তদারকির মধ্যে ছিল। ঢাকায় বিজিএমইএর প্রায় ৮০০টি কারখানা ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে ৪৪টি কারখানায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়েছে।

এবারের ঈদে বেতন-বোনাস নিয়ে বড় ধরনের কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হলেও ছুটি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। সোমবার গাজীপুরের টঙ্গীতে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সময় শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহনে ভাংচুর চালালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২৫ শ্রমিক আহত হন। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে টঙ্গীর মিল গেট এলাকার একটি কারখানায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। সময় মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

শিল্প-কারখানার ছুটি প্রসঙ্গে শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ঈদের সরকারি ছুটি তিনদিন। গার্মেন্টসহ সব শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের ছুটি পাওনা থাকলে কারখানা পর্যায়ে মালিক-শ্রমিক সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ছুটি যে দিনই নেন অবশ্যই কর্মস্থলে থাকতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ঈদ উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে। আপনারা সবাই কষ্ট করে হলেও মাস্ক পরুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনারা বাড়ি যাবেন না। যেখানে আছেন এবারের ঈদ সেখানেই উদযাপন করুন। এতে আপনি যেমন নিরাপদে থাকবেন, আপনার পরিবার-পরিজন নিরাপদে থাকবে, দেশও নিরাপদে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন