দেশে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ১৬ দিনেই মারা গেছে এক হাজার মানুষ। গতকাল ৩৩ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এ সংখ্যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২৪ মার্চ ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হলে গত ২৫ এপ্রিল মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে গতকাল মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫-এ। তবে এ সময় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক হিসেবে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয়। সে সময় টানা চারদিন মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজারে দাঁড়ায়। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, ১২ ডিসেম্বর সাত হাজারের ওপরে ওঠে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আট হাজার ও ৩১ মার্চ মৃতের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়। এতে গত ১৫ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর মাত্র ১০ দিনে আরো এক হাজার করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এতে গত ২৫ এপ্রিল মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজারের ঊর্ধ্বে ওঠে। সর্বশেষ ১৬ দিনে তা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
গতকাল আরো ১ হাজার ২৩০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৫৭। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যাও আট সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ১৪ মার্চ ১ হাজার ১৫৯ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল করোনা রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৫৪টি পরীক্ষাগারে ১৪ হাজার ১৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৯২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গতকাল মারা যাওয়া ৩৩ জনের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। তাদের মধ্যে ২১ জন সরকারি হাসপাতালে, ১০ জন বেসরকারি হাসপাতাল ও দুজন বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১৬ জন ষাটোর্ধ্ব ছিলেন। বাকিদের মধ্যে ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, পাঁচজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর ও দুজন ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিলেন।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর জানায় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম ও মৃতের দিক দিয়ে ৩৭তম।