আলোকপাত

ঈদের বাণিজ্য, নতুন টাকা ও মানুষের ক্রমাবনতিশীল ক্রয়ক্ষমতা

ড. আর এম দেবনাথ

আজ ১২ মে। চাঁদ দেখা গেলে রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ উৎসব। রমজান মাস দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল। মাস খানেক আগে আমরা পেরিয়ে এলাম বাংলা নববর্ষ উদযাপন দিবস পহেলা বৈশাখ। পাহাড়িরা পালন করেছে বৈশাখী উৎসব। এখন সারা দেশে নতুন ধান, আমাদের প্রধান ফসল তুলছেন কৃষকরা। প্রধান ফসল মানে বোরো ফসল। জ্যৈষ্ঠ মাস এসে গেছে। সামনে সরকারের নতুন অর্থবছর ২০২১-২২। জুনের প্রথম দিকেই জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক আখ্যায়িত জীবন জীবিকার বাজেট। এসব আনন্দ উৎসবমুখর দিনগুলো যাচ্ছে ভয়াবহ অতিমারী কভিড-১৯-এর ভেতর দিয়ে। চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বাংলা নববর্ষের শুরু থেকে। সেদিনই আবার ছিল রমজানের প্রথম দিন। সেই থেকে শুরু হয়ে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ এখনো চলছে। অবশ্য কিছুটা শিথিল এখন। চলবে ১৬ মে পর্যন্ত। সরকারি অফিস বন্ধ। রেল-লঞ্চ বন্ধ। সরকার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যার যার জায়গা থেকে ঈদ উদযাপন করতে। উদ্দেশ্য ভয়াবহ কভিড  সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া। প্রতিবেশী ভারতে কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে। এতসবের মধ্যে কেমন যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি, কেমন ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা? ঈদে বলতে গেলে সারা বছরের ব্যবসা হয়, বাকি বারো মাসে দোকান খরচ তোলেন তারা। তাই সবাই জানতে চায় ব্যবসা-বাণিজ্য, পাইকারি খুচরা ব্যবসা কেমন চলছে। কেমনই বা মানুষের আর্থিক অবস্থা। সম্পর্কে সরকারি কোনো তথ্য নেই। পাইকারি-খুচরা বেচাকেনার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মানুষের আর্থিক অবস্থা কেমন, সে সম্পর্কেও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। যদিও কোনো কোনো বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নানা রকম তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাও আর্থিক অবস্থার ওপর তথ্য দিচ্ছে। এসবের মধ্যেই একটা ছোট্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। খবরের কাগজে দেখলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক এবার ঈদ উপলক্ষে বাজারে ১৪ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়বে। বলা হয়েছে, সারা বছর ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার নোটের দরকার পড়ে। এর মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশই দরকার পড়ে দুই ঈদে। উল্লেখ্য, গত বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ছেড়েছিল মানে কী? বাংলাদেশ ব্যাংক কি বিনা পয়সায় নতুন নোট মানুষকে দিয়েছিল? নিশ্চয়ই তা নয়। লোকেরা পুরনো নোট বদল করে নতুন নোট নিয়েছে। নিয়েছে অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ইস্যু করে ইস্যু বিভাগ। ওই টাকা যায় তাদের ব্যাংকিং বিভাগে। সেখান থেকে নিয়মের অধীনে যায় ব্যাংকে ব্যাংকে। ব্যাংকগুলো পুরনো নোটের বদলে নতুন নোট দেয়। টাকা তুললেও নতুন নোট দেয়। এত কথা কিসের জন্য? এজন্য যে এর থেকে আর্থিক অবস্থার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নতুন নোটের চাহিদা এবার অর্ধেকেরও কম। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব। তাদের অনুমান, গত বছর যেখানে লেগেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট, সেই স্থলে এবার লাগবে মাত্র ১৪ হাজার কোটি টাকা। হিসাব থেকে বোঝা যায়, নতুন নোটের চাহিদা হবে কম। কম কেন? ঈদের সময় সবাই ছোট-বড় নতুন নোট পছন্দ করে। বকশিশ প্রদান, ঈদ সেলামি এবং দানের সময় সবাই নতুন নোট দিতে পছন্দ করে। কারণেই নতুন নোটের চাহিদা বাড়ে ঈদের সময়। এবার চাহিদা কম। কারণ অবশ্যই একটামানুষের হাতে টাকা কম। মানুষের রোজগার কম। অনেকেরই রোজগার নেই। অনেকেই ধারকর্জ করে চলছে। অনেকে কর্মচ্যুত, অনেকে চাকরিচ্যুত। বেচাকেনা কম, লেনদেন কম। মানুষের চলাফেরা সীমিত। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন খরচ করছে না। ধনীদের অবশ্য খরচ করার জায়গা নেই। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। বিনোদন বন্ধ। বিদেশ ভ্রমণ কার্যত বন্ধ। এসব কারণে নগদ টাকার, ক্যাশের ব্যবহার কম। অতএব বকশিশ প্রদান, দান-দক্ষিণা ইত্যাদি খাতে প্রয়োজন হবে কম টাকা। কারণে নতুন নোটের ব্যবহার চাহিদাও হবে কম।

নতুন নোটের চাহিদা দিয়ে অর্থনীতির একটা চিত্র বোঝার চেষ্টা করলাম। এছাড়া অর্থনৈতিক চিত্র বোঝা যায় জিডিপি, আমদানি-রফতানি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায় রাজস্ব ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ইত্যাদির তথ্য থেকে। উন্নয়ন ব্যয়, বাজেট ঘাটতি ইত্যাদির তথ্য থেকেও অর্থনৈতিক অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এসব হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফল। বোঝাই যাচ্ছে, এবার অর্থনৈতিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বড় রকমের বিঘ্ন ঘটছে। দোকানদাররা নববর্ষে বেচাকেনা করতে পারেননি। জামাকাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, পায়জামা-পাঞ্জাবি, প্রসাধনসামগ্রী, কাটপিসের কাপড়, সেলাই দর্জির কাজ, ফ্যাশনকর্মীদের কাজ, টেলিভিশন-ফ্রিজ বিক্রি, সাইকেল-মোটরসাইকেল বিক্রিতে এবার চলছে বিরাট মন্দা। চলাচলে সরকারি বিধিনিষেধ একটা কারণ। তবে তা প্রধান কারণ নয়। আয়-রোজগার প্রধান কারণ। বহু দোকানদার এবার স্টক করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মানুষ দোকানমুখী হতে পারেনি। পরিবহনকর্মী, হোটেল-রেস্তোরাঁ কর্মী, দোকান কর্মচারী, নরসুন্দর, বিউটি পার্লার কর্মী, ছোট ছোট দোকানদার, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, চাকরিচ্যুত ইত্যাদি মানুষ এখন বাজারে কম। বাজারে একমাত্র সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা, যারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন। আর গ্রামের বাজার ধরে রেখেছে রেমিট্যান্স প্রাপকরা। দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মন্দা এবং অন্যান্য বাধা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্সে আমাদের কোনো ঘাটতি পড়েনি। যথারীতি ঈদের মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এপ্রিলে ২০৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে হাজার ৬৬ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল মাত্র হাজার ৪৮৬ কোটি ডলার। বর্ধিষ্ণু রেমিট্যান্স দেশের কিছু অঞ্চলের গ্রামের অর্থনীতিকে উজ্জীবিত রাখছে। রফতানির বাজারও মন্দ নয়। জুলাই-এপ্রিলের মধ্যে আমাদের মোট রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে হাজার ২০৭ কোটি ডলার। একই সময়ে গত বছর রফতানির পরিমাণ ছিল হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার। বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় শতাংশ। বলা বাহুল্য, এট পোশাক খাতেরই অবদান। এতে যে ৩০-৪০ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ করেন, তাদের বেতন-ভাতা মোটামুটি নিশ্চিত থাকার কথা। বোঝা যায় আমদানির পরিমাণ কম। ফলে রফতানি বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড করে চলেছে। বর্তমানে ১০-১১ মাসের আমদানির সমপরিমাণ রিজার্ভ আমাদের গড়ে উঠেছে। অবশ্য সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে এবার বেশ ঘাটতি দেখা দেবে। রাজস্ব আদায় কম হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কাটছাঁট হবে। এসব মন্দার লক্ষণ। এরই মধ্যে সরকার অবশ্য বাজার চাঙ্গা করার জন্য প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মোবাইল সার্ভিসের মাধ্যমে পরিবারপ্রতি হাজার ৫০০ টাকা করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। ঈদ সামনে রেখে এতে মোট প্রায় হাজার কোটি টাকা বাজারে এসেছে। অবস্থার মধ্যেই ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হতে যাচ্ছে। খবরের কাগজের প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে লাখ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি। তা হোক। দেখা যাচ্ছে, বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে দশমিক ৫। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হবে দশমিক ভাগ। এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে দশমিক ভাগ।

বাজারের মন্দা, মানুষের আর্থিক অনটন, রাজস্ব ঘাটতি ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে সরকার কী ধরনের বাজেট করতে যাচ্ছে তা এখনো বলা আমাদের পক্ষে কঠিন। তবে দুটো বক্তব্য থেকে বাজেটের ধরন সম্পর্কে একটা ধারণা করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের বক্তব্য। তিনি দেখলাম একটা কাগজে বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে জীবন জীবিকার বাজেট। আবার এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী জোর দিয়েছেন ছোট ছোট উদ্যোক্তার/ব্যবসার ওপর। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বড় বড় ব্যবসায়ীর বদলে ছোটদের ঋণ দিতে বলেছেন। গত ১৯ এপ্রিল তিনি বলেছেন, বড় ব্যবসায়ীরা বিদেশে যান, সঙ্গে টাকাও চলে যায়। দুজন মন্ত্রী যদি সমন্বয় করে বাজেট করেন, তাহলে তাদের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় আগামী বাজেট কী ধরনের হবে।

জীবন জীবিকার বাজেটের প্রথম কথা হলো খাদ্যনিরাপত্তা। খাদ্যনিরাপত্তার তিনটি দিক: খাদ্যোৎপাদন সরবরাহ, খাদ্যমূল্য এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাবনতিশীল। সব বেসরকারি গবেষণাই বলছে, মানুষের আয় কমছে, মানুষ বেকার হচ্ছে, কর্মচ্যুত হচ্ছে। মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত হচ্ছে, নিম্নমধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হচ্ছে, নিম্নবিত্ত গরিব হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে। দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ ধারদেনার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে, ঋণী হয়ে পড়ছে। অথচ জিনিসপত্রের দামের কথা বাদ দিলাম, চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। বণিক বার্তার খবরের শিরোনাম উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে চালের মূল্যস্ফীতি স্টোরিতে ২০২০ সালের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত নভেম্বর ডিসেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাড়ে শতাংশ দশমিক শতাংশ। এর বিপরীতে চালের মূল্যস্ফীতি ছিল দুই মাসে যথাক্রমে ২১ দশমিক ১৯ দশমিক শতাংশ। এরপর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল গেছে। চালের মূল্যস্ফীতিতে কি ছেদ পড়েছে? তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বলা হচ্ছে, সরকারের গুদামে চালের মজুদ খুবই কম সুযোগে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। অবশ্য এর মধ্যে একটা বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের চাল উৎপাদন কত? চালের চাহিদা কত? চাল গমের মোট চাহিদা কত? বলা বাহুল্য, এসব ক্ষেত্রে একটা গোঁজামিল চলছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে একটা, খাদ্য মন্ত্রণালয় একটা এবং কৃষি মন্ত্রণালয় আরেকটা। ফাঁকে সংকটের পর সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু চাহিদা কত, উৎপাদন কত, এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অতএব আমদানিতে হচ্ছে বিঘ্ন। সুবিধা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বলা বাহুল্য, এখন যে করোনা পরিস্থিতি তাতে চালের বিষয়টা আর হেলাফেলা করা যাবে না। করোনা মহামারী কতদিন চলবে কেউ আমরা জানি না। বলা হচ্ছে, এর তৃতীয়-চতুর্থ ঢেউ আসবে। এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমছে। এর মধ্যে যদি চালের দাম বাড়তির দিকে থাকে, তাহলে লাখ লাখ লোককে কে খাওয়াবে? আবার বাজারে চাল থাকলেই তো হবে না, চাল ক্রয় করার ক্ষমতা লাগবে, যা এখনই নেই বহু লোকের। মহামারী যদি অব্যাহত থাকে, পরিস্থিতি যদি দুদিন ভালো থাকে এবং আবার খারাপ হয় তাহলে গরিব লোকের ভার কে নেবে? ব্যাপারটি সম্পর্কে বাজেটে ভালো করে ভাবতে হবে। চালের পর্যাপ্ত স্টক দরকার। গুদাম দরকার। চাল কেনার পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ থাকা দরকার। দেশীয়ভাবে চালপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হলে তা আমদানি করার ব্যবস্থা দরকার।

চাল প্রাপ্তিই যথেষ্ট নয়। গরিব মানুষের হাতে দরকারবোধে নগদ অর্থ দিতে হবে, যাতে তারা চাল কিনে খেতে পারে। অন্যথায় বিনামূল্যে চাল তাদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নগদ অর্থ বা চাল দেয়ার দরকার হবে না, যদি রোজগারের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু করোনা তীব্রতর হলে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ব্যাপারে ভারতের বর্তমান অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া দরকার। তাদের অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই, হাসপাতালে স্থান নেই। তাদের সুবিধা তাদের প্রচুর চাল/গম স্টক আছে। টাকা/ টাকা দরে তা দেয়া হয়। বিনামূল্যেও দেয়া হয়। আমাদের অবস্থা হলে প্রচুর ক্যাশের দরকার হবে। তা জোগাড় করার সময় অর্থমন্ত্রী যদি বাজেট ঘাটতির দিকে নজর দেন তাহলে বিপদ হবে। এখন বাজেট ঘাটতি দেখার সময় নয়। মানুষ বাঁচানো, জীবিকা বাঁচানো প্রধান কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছরান্তে ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছে। ২০২০ ডিসেম্বরে দিয়েছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-এর মার্চে দিয়েছ দশমিক ট্রিলিয়ন ডলার। এবার আসছে ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো বিল। আমাদেরও বাজার ঠিক রাখতে, মানুষের ভাত জীবিকা ঠিক রাখতে এমন প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের পরামর্শ অনুযায়ী ছোট ছোট ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। ওই টাকায় লাখ লাখ লোক উপকৃত হবে। টাকা বাজারে বাজারে যাবে। ধনীদের, বড়দের, বিশাল বিশাল ব্যবসায়ীকে টাকা দিলে পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে তা যাবে বিদেশে। তাই এটা পরিহার করতে হবে। মোট কথা যেকোনো অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থার জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। বাজেট কাঠামোটিও এমন হতে হবে।

 

. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন