দ্রুত ব্যাপ্তি বাড়ছে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পে

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে হাজির হয়েছিল। তবে প্রকৃতির জন্য মহামারীটি কিছু সুফলও নিয়ে এসেছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধে গত বছরজুড়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কার্বন নির্গমন রেকর্ড শূন্যে নেমেছিল। পাশাপাশি কভিডের সময়ে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) মতে, গত বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের প্রবৃদ্ধির গতি ১৯৯৯ সালের পর সর্বোচ্চ। আগামীতে গতি অব্যাহত থাকবে বলেও আশা করছে সংস্থাটি। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্বজুড়ে জ্বালানি শক্তি নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি জানিয়েছে, কভিড-১৯ মহামারী বৈশ্বিক জ্বালানি শিল্পের পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। গত বছর বায়ু সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প আগের বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

গত বছর বায়ুবিদ্যুতের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পাশাপাশি মহামারীর আগের তুলনায় সৌরবিদ্যুৎ ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সময়ে সরকার সংস্থাগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝোঁকার জন্য এমন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ক্লিন এনার্জির এমন প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করছে আইইএ। চীন, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার তুলনায় জ্বালানি দ্রুত প্রসারণের কারণে আগামী বছরগুলোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির পূর্বাভাস পূববর্তী প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, সরকারগুলোকে সৌর বায়ুশক্তিতে বৃহত্তর বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নীতিমালা তৈরি করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গতি বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্রিড পরিকাঠামো প্রয়োজন হবে এবং অন্যান্য মূল নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি যেমন জলবিদ্যুৎ, জৈববিদ্যুৎ ভূতাপীয় খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বকে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্প্রসারণ অপরিহার্য।

কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশেরও বেশি রেকর্ডের পরে চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সিলিকন, গ্লাস, ইস্পাত, তামা অন্যান্য বিরল উপকরণসহ বায়ু টারবাইন সৌর প্যানেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহকারীদের মধ্যে অন্যতম। তবে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ জ্বালানির চাহিদা মেটাতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যবহার করায় চীন গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনেও শীর্ষে রয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২০৬০ সালের মধ্যে চীন কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আগামী দশ বছরে দেশটির কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৬০০টি বন্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প তৈরি করতে হবে। তবে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির সময়সীমা অতিক্রম করার ফলে আগামী বছরগুলোয় দেশটির নবায়নযোগ্য জ্বালানির বৃদ্ধি ধীর হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইইএ বিশ্বাস করে চলতি বছর পুরো ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য উদীয়মান চাহিদা বিশ্বজুড়ে শিল্পের বার্ষিক প্রবৃদ্ধিকে গত বছরের স্তরের কাছেই রাখবে। আইইএর সমীক্ষার শীর্ষস্থানীয় গবেষক হেইমি বাহার গত বছরের নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রবৃদ্ধিকে অভূতপূর্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ প্রবৃদ্ধির গতি সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে দেখা গিয়েছিল। যদিও এরপর গত দুই দশকে শিল্পটি বড় আকার ধারণ করেছে।

আইইএর সর্বশেষ পূর্বাভাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রাক্কলন বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বাইডেন প্রশাসন নবায়নযোগ্য জ্বালানির আরো দ্রুত বৃদ্ধির আশা করছে। আগামী ১০ বছরে প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নির্গমন অর্ধেক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উপকূলীয় বায়ুবিদ্যুতের ক্ষমতার এক-চতুর্থাংশে পৌঁছে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এটি বিশ্বের মধ্যে একমাত্র দেশ, যেখানে অন্যান্য ভূমির চেয়ে উপকূলে বেশি বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন