মিয়ানমারে ব্যবসা চালানো নিয়ে সংশয়ে টেলিনর

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নেয় সামরিক জান্তা। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে সাধারণ জনগণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে চালু টেলিকম সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় জান্তা সরকার। ফলে বন্ধ হয়ে যায় টেলিনরের ব্যবসাও। এর পর থেকেই দেশটিতে কার্যক্রম চালু রাখা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে টেলিনর।

এক দশক আগে বেশকিছু পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিয়ানমারে ব্যবসা করতে আসে টেলিনর। নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটিই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী। অন্যদিকে দেশটিতে টেলিনরের ব্যবসা খুব একটা কম নয়। গত বছরও টেলিনরের মোট রাজস্ব আয়ের শতাংশ এসেছিল মিয়ানমার থেকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে ব্যবসা চালানো নিয়েই দোটানায় পড়ে গিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে দেয়া বক্তব্যে দ্বিধার বিষয়টি স্বীকার করেছেন টেলিনরের প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেক্কেও। তার ভাষ্যমতে, মুহূর্তে টেলিনর যদি মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার পরও সেখানে ব্যবসা চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়।

এদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে টেলিনরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ক্রিস সিডোটি বলেন, টেলিনরের উচিত কর বা লাইসেন্স ফির মতো অর্থ পরিশোধ না করা। এমন কোনো খাতে কোম্পানিটির অর্থ দেয়া উচিত হবে না, যা জান্তা সরকারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দেয়। আর যদি তারা সেটি না পারে তাহলে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়াই ভালো।

তবে ভিন্ন মত দিয়েছেন নরওয়ের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড। তিনি বলেন, টেলিনরের উচিত মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি সুপ্রতিষ্ঠিত বিদেশী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করে সামরিক জান্তার কঠোর সমালোচনা করা।

তিনি আরো বলেন, নরওয়ে সরকার মিয়ানমারে টেলিনরের ব্যবসাকে সমর্থন জানালেও সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক করেছিল। টেলিনরকে এটা বলা হয়েছিল যে দেশটিতে একনায়কতন্ত্র বিদ্যমান। শুরু থেকেই টেলিনর এসব জানত। এমন তো নয় যে তারা ব্যবসায় নতুন।

টেলিনরের বড় একটি অংশের মালিক নরওয়ে সরকার, যারা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের লড়াইকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি মিয়ানমারের গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে।

দেশটির সর্বশেষ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগে রাতারাতি ক্ষমতা দখল করে নেয় সামরিক জান্তা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার জন্য সাবেক ক্ষমতাসীন দল বিক্ষোভকারীদের দায়ী করেছে তারা। এসব নিয়ন্ত্রণেই সেলফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে সেনাশাসিত সরকার বলছে, আগামীতে সেলফোন নেটওয়ার্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের।

সামরিক শাসনের অধীনে থেকে এবারই প্রথম ব্যবসা করছে না টেলিনর। এর আগে পাকিস্তান থাইল্যান্ডেও তারা এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা করেছে। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা নিয়ে থাই জান্তার সঙ্গে বিবাদও হয় তাদের। এবার মিয়ানমারেও সে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৩ সালে যে দুটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারে কাজ করার লাইসেন্স পায়, তার একটি টেলিনর। সে সময় কাতারের প্রতিষ্ঠান ওরেডোও লাইসেন্স পায়। এছাড়া মিয়ানমারে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বা সেনাসমর্থিত দুটি সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো হলো এমপিটি মাইটেল।

মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে কোটি ৮০ লাখই টেলিনরের গ্রাহক। শুরু থেকেই দেশটিতে নানা বিপত্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। কোম্পানিটির সাবেক এক প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, শুরুতে কিছুদিন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের মাটিতে বসে কাজ করতে হয়েছে। কারণ ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ টেলিনরের জন্য আমদানি করা আসবাব খালাস করতে দিচ্ছিল না। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন স্থানে সেলফোন টাওয়ার বসানো নিয়েও নানা ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাদের।

অভ্যুত্থানের পর সেনা সরকার টেলিনরসহ সব সেলফোন সেবাদাতাকে নেটওয়ার্ক বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। টেলিনর পদক্ষেপের সমালোচনা করলেও সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অন্য সব অপারেটরের মতো গত মার্চে নির্ধারিত লাইসেন্স ফি জমা দেয় টেলিনর। তবে ফির অর্থ সামরিক জান্তার কাজে লাগার অভিযোগে টেলিনরকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন