তিনদিনে বীমা খাতের লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি বিশেষ করে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই টাকার অংকে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া খাতগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার। অবশ্য গত তিন কার্যদিবসেই সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর নিম্নমুখী। দুই কার্যদিবস ধরে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও কমছে। সব মিলিয়ে গত তিন কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বীমা খাতের হাজার ৯৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের মে সাধারণ বীমা খাতের  ৪০৯ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পরদিন লেনদেন হয়েছে ৩২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার।  মে খাতের শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন কার্যদিবসে সাধারণ বীমা খাতের ৯৫৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সময়ে জীবন বীমা খাতে ১৪০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মে ৮১ কোটি ৯৫ লাখ, মে ৩৭ কোটি ১৫ লাখ এবং মে ২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

তিন কার্যদিবসের পতনে পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনে সাধারণ জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অবদান কমেছে। মে বাজার মূলধনের দশমিক শতাংশ ছিল সাধারণ বীমা খাতের। মে এটি কমে দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দখলে ছিল বাজার মূলধনের দশমিক শতাংশ। যা মে কমে দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গত তিন কার্যদিবসে ডিএসইর দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই ছিল বীমা খাতের। সময়ে সবচেয়ে বেশি দর কমা বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প মূলধনি হওয়ার কারণে বীমা খাতের শেয়ার সংখ্যাও কম। ফলে খাতের শেয়ার নিয়ে সহজেই কারসাজি করা সম্ভব। দুই মাস ধরে বীমা খাতের শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে চিহ্নিত কিছু পুরনো কারসাজি চক্রের সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের অনেকেই অবগত রয়েছেন। এর আগে শেয়ারদর কারসাজির দায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে সতর্ক বার্তা পেয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি গত দুই কর্মদিবস বীমা খাতের শেয়ারে বড় অংকের লেনদেন করেছেন। তার সঙ্গে গত বছরের শেষার্ধে বীমা খাতের শেয়ারদর বাড়ানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুরনো কারসাজি চক্রের সদস্যও রয়েছেন। এছাড়া চক্রের অংশীদার হিসেবে আরো বেশ কয়েকজন সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তাদের লক্ষ্যই থাকে নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করা। যখন তাদের ফাঁদে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা গ্যাম্বলিং শেয়ারে বিনিয়োগ করতে থাকে তখন ধীরে ধীরে করসাজি চক্রের সদস্যরা নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যায়। তবে গত বছরের শেষার্ধে বীমা খাতের শেয়ারদরে যে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছিল তখন কারসাজি চক্রের সদস্যরা নিজেদের বিনিয়োগের পুরো অর্থ বের করতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় দফায় বীমা খাতের শেয়ারদর বাড়িয়ে তারা তাদের আটকে থাকা অর্থ উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন