কলোনিয়াল পাইপলাইনে সাইবার হামলা

সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল সরবরাহ নেটওয়ার্ক কলোনিয়াল পাইপলাইন। পাইপলাইনে সাইবার হামলার পরই বাড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গতকাল জ্বালানি পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারদরে ঊর্ধ্বগতি দেখল পণ্যটি। এদিকে শুক্রবার ঘটে যাওয়া ওই হামলার পর কলোনিয়াল পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তেল অবকাঠামোগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খবর রয়টার্স।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৫৭ সেন্ট বা দশমিক শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ দশমিক ৮৫ ডলারে পৌঁছেছে। গত সপ্তাহেও ব্রেন্টের দাম এক দফা বেড়েছিল। ওই সময় জ্বালানি পণ্যটির দাম দশমিক শতাংশ বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ৫১ সেন্ট বা দশমিক শতাংশ বেড়ে ৬৫ দশমিক ৪১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত সপ্তাহে ডব্লিউটিআইয়ের দাম শতাংশেরও বেশি বেড়েছিল। তেলের বাজারের পাশাপাশি গ্যাসোলিনের দামও বেড়েছে। জ্বালানি পণ্যের দাম গতকাল প্রায় শতাংশ বেড়ে যায়।

এদিকে সাইবার হামলার কারণে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার হামলার জেরে এরই মধ্যে জরুরি আইন জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন সরকার র্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত কলোনিয়াল পাইপলাইনকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।

লিপ্যো অয়েল অ্যাসোসিয়েটসের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু লিপ্যো রয়টার্সকে বলেন, সাইবার হামলাকারীরা অবকাঠামোগুলোতে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পথ বের করতে পারদর্শী। বর্তমানে এটি সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরো বলেন, অবকাঠামোগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ম্যালওয়্যারের প্রতিরোধী নয়। কোনো একটি অবকাঠামোয় ভিন্ন ভিন্নভাবে হামলাকারীরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তা রুখে দেয়ার সক্ষমতাসমৃদ্ধ নয় এসব অবকাঠামো।

কলোনিয়াল পাইপলাইন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহের অন্যতম উৎস। ১৯৬২ সালে এটি গড়ে তোলা হয়। এর দৈর্ঘ্য হাজার ৫০০ মাইলেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের জ্বালানি চাহিদার ৪৫ শতাংশ পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ করা হয়। এতে দুটি সরবরাহ লাইন রয়েছে। একটিতে গ্যাসোলিন সরবরাহ করা হয়, অন্যটি দিয়ে সরবরাহ করা হয় ডিজেল জেট ফুয়েল। প্রতিদিন ২৫ লাখ ব্যারেল গ্যাসোলিন অন্যান্য জ্বালানি পরিবহন করে কোম্পানি। শুক্রবার র্যানসমওয়্যার অপারেটররা কলোনিয়াল পাইপলাইনে হামলা চালায়।

পাইপলাইন কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে জানায়, হামলার পর পরই তারা তাদের কিছু সিস্টেম বন্ধ করে দেয়। ফলে সাময়িকভাবে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং আইটি সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, হ্যাকাররা বড় কোনো পেশাদার সাইবার ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য হতে পারে।

কলোনিয়াল পাইপলাইন জানায়, এটির প্রধান জ্বালানি তেল সরবরাহ লাইনগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে টার্মিনাল ডেলিভারি পয়েন্টের মধ্যবর্তী কিছু ছোট সরবরাহ লাইন চালু রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পাইপলাইন নেটওয়ার্কটি কবে নাগাদ পুরোপুরি চালু হবে তা জানায়নি কলোনিয়াল পাইপলাইন।

এর আগে ২০১৭ সালে গালফ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় হার্ভে আছড়ে পড়ার পরও কলোনিয়াল পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনে ছিদ্র শনাক্ত হওয়ায় এবং নভেম্বরে আলাবামায় পাইপলাইনের পাশ দিয়ে আগুন লাগায় ১১ দিন এর কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন