ঘরমুখী মানুষের ঢল অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ সামনে রেখে অব্যাহত রয়েছে ঘরমুখী মানুষের ঢল। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত আর ছোট ছোট গাড়িতে চেপে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দূরপাল্লার বাস চলারও অভিযোগ আসছে। অন্যদিকে কয়েকদিনের মতো গতকালও ছিল দেশের অন্যতম দুই ফেরিঘাট বাংলাবাজার পাটুরিয়ায় ঘরমুখী মানুষের ভিড়। তবে অধিকাংশ ফেরি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন মানুষ।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধির কারণে দেশে গত এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস। তবে মে থেকে স্বল্পপাল্লার বাস চালু হওয়ার পর থেকেই মানুষ ভেঙে ভেঙে দূরের গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের মতো বাহনে চেপেও মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। ঢাকার গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ সবকটি প্রবেশদ্বারে ঘরমুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। গাড়ি না পেয়ে অনেককে হেঁটেও যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

জেলার বাসের পাশাপাশি ঘরমুখী মানুষকে পরিবহন করতে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী গাড়িকে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এসব যানবাহনের চালকদের দেখা গেছে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের নিজ গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতে। এভাবে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে প্রশাসনেরও কোনো ধরনের তত্পরতা চোখে পড়েনি গতকাল।

এদিকে কয়েকদিনের মতো গতকালও বাংলাবাজার পাটুরিয়া ঘাটে ছিল ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বিজিবি মোতায়েন করেও ঘরমুখী মানুষকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। প্রশাসন, পুলিশ বিআইডব্লিউটিসি নৌপথে ফেরি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের ঘাট ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। বলা হয়েছে, রাতের বেলায়ও কোনো ফেরিতে যাত্রী পরিবহন করা হবে না। কেবল পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করা হবে। দিনের বেলায় মরদেহবাহী গাড়িগুলোকে যমুনা সেতু ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

ফেরি না পেয়ে অনেক যাত্রী ট্রলার স্পিডবোটে চেপেও পদ্মা পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তত্পর ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী বহনের ঘটনায় ১৭টি ট্রলার জব্দ করে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দূরপাল্লার বাসও চলার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে রাতের বেলা বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে বাস ছেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

করোনা মহামারীর আগে ঈদের সময় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে থাকত তীব্র যানজট। - ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লেগে যেত ১৫-২০ ঘণ্টার মতো। তবে মহামারীর কারণে বাস বন্ধ থাকায় এবার মহাসড়কগুলোর চিত্র ভিন্ন। কোনো মহাসড়কেই খুব একটা যানজট নেই। বাসের বদলে এবার মহাসড়কগুলোতে ছোট ছোট যানবাহনের আধিক্য দেখা যাচ্ছে।

ঈদের সময় সবকিছু খোলা রেখে কেবল দূরপাল্লার বাস চালু রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছে, বন্ধ রাখলে সবকিছুই বন্ধ রাখা উচিত ছিল। কিন্তু জেলার বাস চালানো হচ্ছে। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ, রিকশা-অটোরিকশা সবাই যাত্রী পরিবহন করছে। সবকিছু চলার অনুমতি দিয়ে কেবল দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি কেবল তাদের দুর্ভোগই বাড়িয়েছে বলে মনে করছে তারা। যাত্রাপথে দুর্ভোগের পাশাপাশি যাতায়াতে কয়েক গুণ টাকা খরচ হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

করোনা মহামারীর কারণে গত এপ্রিল শুরু হওয়া সরকারি বিধিনিষেধের মাধ্যমে এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ট্রেন চলাচল। ঈদের সময় মানুষের যাতায়াতের জন্য এসব গণপরিবহনই ছিল প্রধান মাধ্যম। এবার এসব পরিবহন বন্ধ রেখে সরকার মানুষকে ঈদযাত্রায় নিরুৎসাহিত করছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনার ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে গ্রামের বাড়িতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন