আলোকপাত

বাংলাদেশের অগ্রগতির লড়াই দেখছে বিশ্ব

ড. এ কে আব্দুল মোমেন

বর্তমান সরকারের শাসনামলে গত দুই দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন এইচএসবিসির সর্বশেষ গ্লোবাল রিসার্চে বলা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০: আওয়ার লং-টার্ম প্রজেকশনস ফর ৭৫ কান্ট্রিজ শিরোনামের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপে উন্নীত হবে; যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অধিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের তালিকায় বাংলাদেশের পরেই ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম মালয়েশিয়ার নাম এসেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে উন্নত দেশ নরওয়ের চেয়েও বাংলাদেশের অধিক সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী কার্যকর অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ফলে।

ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনের স্বপ্ন আজীবন লালন করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তার সেই স্বপ্নের বীজ আজ পরিণত হয়েছে সুবিশাল বটবৃক্ষে। শেখ হাসিনার সরকার দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাস এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সুসংহত করে জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের সংবিধানেও দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠীকে সমাজের আর্থসামাজিক মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমান সরকার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ তথা রূপকল্প ২০২১- এই বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিফলন পথনির্দেশ সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রতিশ্রুতির অভীষ্ট লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য হ্রাসে এরই মধ্যে বাংলাদেশের অর্জিত অগ্রগতিকে ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন তার টেকসই সমাধান। পাশাপাশি দরিদ্র জনগণ যেসব ঝুঁকিতে রয়েছে, তার প্রভাব হ্রাসের মাধ্যমে অগ্রযাত্রাকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করাও এর লক্ষ্য। সরকার টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের ব্যাপ্তি বাড়ানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেবল ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১১ লাখ মানুষ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিধবা দুস্থ নারীদের ভাতা প্রদানের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে হাজার ২০ কোটি টাকা। সময়ে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী হলো ৪৪ লাখ মানুষ। চলতি বাজেটে বয়স্ক ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় মাথাপিছু ৭৫০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করেছে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে। খাতে চলতি বাজেটের বরাদ্দ হাজার ৩৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। জনপ্রতি মাসিক ৭৫০ থেকে হাজার ৩০০ টাকা হারে প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি প্রদান করেছে এক লাখ সুবিধাভোগীকে। গত অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা ছিল ৮৬ লাখ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আটটি খাতে মোট ৭৫ লাখ মানুষকে ভাতা দেয়া হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবতার খাতিরে আশ্রয় অন্নের জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের কোনো দেশই যখন কার্যত ফিরে তাকায়নি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তখন উদারচিত্তে স্থাপন করেছেন মানবতার অনন্য নজির। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। মানবতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।

বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মাত্র এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নিয়ে বাসস্থান নির্মাণ বাবদ বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০১৮ সালের জুনে জাতিসংঘের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এই ১০ লাখ রোহিঙ্গার পেছনে বছরে খরচ হতে পারে অন্তত ৬০ কোটি ডলার। দুই বছরের হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার। এর বাইরেও ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের বাজেটে আলাদা করে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বছরেও রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের দেয়া বরাদ্দের পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

বিশ্বনেতৃত্ব কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশ্বের বহু উন্নত রাষ্ট্র যখন করোনা মোকাবেলায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের চিত্র অনেকটাই সন্তোষজনক। অন্যান্য দেশের চেয়ে মৃত্যু আক্রান্তের হার বেশি। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে না পারলেও বাংলাদেশ শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের ২৩তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ করোনা টিকা প্রদান শুরু করে। করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকেই উদ্যোগী ছিল সরকার। সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত বন্ধ করে দেয়া পর্যন্ত সব পদক্ষেপই সঠিকভাবে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস খুব বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। করোনা প্রতিরোধের লড়াইয়ে প্রথম থেকেই সম্মুখসারিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সক্ষমতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মহামারীতে মৃত্যু, শোক আর সংকটের একটি বছর পেরিয়ে এসে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিজয়ের লড়াইয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। করোনা প্রতিরোধে তিনটি ফেইজে মোট পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে বিনা মূল্যে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ এক গর্বিত অংশীদার। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে ডিআর কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সব সংঘাতপূর্ণ এলাকার জনমনে শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। শান্তি রক্ষা মিশনে অবদান রাখা দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নয়ন সমৃদ্ধির মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক দশকে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানসহ আয়স্তর বেড়েছে। বেড়েছে গড় আয়ু, কমেছে মৃত্যুহার। নারী শিশু উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব নারী শিশু উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন তার বাণীতে। শিশুমৃত্যু হার কমানো, স্যানিটেশন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে অর্জন হয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য নিরসনের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে বিশ্বজুড়ে। দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে যেসব দেশ, তার মধ্যে বাংলাদেশ এখন নম্বরে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি প্রকাশিত মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স ২০১৯- উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাফল্যের চিত্র। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যএসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তার প্রথমটি হলো দারিদ্র্য বিমোচন। ২০৩০ সালের মধ্যে সব জায়গা থেকে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য দূর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ অধিভুক্ত দেশগুলোর সক্ষমতা অগ্রগতি পর্যালোচনা বোঝার একটি কৌশল হলো মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স বা এমপিআই। এর ভিত্তিতেই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন করছে এমন তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অন্য দুটি দেশ হলো ভারত কম্বোডিয়া। বাংলাদেশ ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় কোটি ৯৩ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছে।

এমডিজির চতুর্থ লক্ষ্য, শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে ২০১০ সালেই ২০১৫-এর লক্ষ্য অর্জন করে বাংলাদেশ। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড-২০১০- ভূষিত করে। শিশু মাতৃ মৃত্যুহারসংক্রান্ত এমডিজি- এমডিজি--এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করেছিল। ফলে বাংলাদেশের জন্য দুটি লক্ষ্য অর্জন করাও সহজ হয়েছিল। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশকে সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড- ভূষিত করা হয়। নারীশিক্ষায় ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কো পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এমডিজি--এর আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে তার ভূমিকার জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয় এবং ইউএন-উইমেনের পক্ষ থেকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অন্যান্য সংস্থার প্রধানরা বাংলাদেশের উন্নয়নে হাত প্রসারিত করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের বাণী অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। বিশ্বের প্রধান প্রধান রাষ্ট্রনায়কের বাণীর পাশাপাশি উপমহাদেশের রাষ্ট্র সরকারপ্রধানদের মধ্যে থেকে যে দুজন প্রেসিডেন্ট, তিনজন প্রধানমন্ত্রী করোকালীন বাংলাদেশে এসেছেন, তাতে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়েছে। এর আগে কখনই ১০ দিনে এতসংখ্যক রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশে আসেননি। শেখ হাসিনা সরকারের এটি একটি অন্যতম সাফল্য। করোনার এই দুঃসময়েও তার আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশের প্রধানরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের আগমনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বিশ্বাসের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আবারো।

পাঁচজন রাষ্ট্র সরকারপ্রধানের সফরের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু জড়িত। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে তাদের ওপর। প্রধানমন্ত্রী সময় অঞ্চলের আঞ্চলিক উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য সবার কাছেই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে একটি হলো কানেকটিভিটি। উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর কানেকটিভিটি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এতে সারা উপমহাদেশে মানুষের মঙ্গল হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের গত এক দশকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত খাত যেমন নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবেশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জনযোগাযোগ বৃদ্ধি স্বাস্থ্য প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন অপ্রচলিত খাত যেমন ব্লু ইকোনমি মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানি, সাইবার সিকিউরিটি প্রভৃতি খাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত হয়েছে। নিরাপত্তা, ব্যবসায় বাণিজ্য, বিদ্যুৎ জ্বালানি, পরিবহন যোগাযোগ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, নদী সমুদ্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ৬০টিরও বেশি দ্বিপক্ষীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রয়েছে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপের সঙ্গেও একই রকম সৌহার্দমূলক সম্পর্কে বিশ্বাসী বাংলাদেশ। আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসন করে পারস্পরিক সহায়তা সহযোগিতামূলক উন্নয়ন নীতি গ্রহণ, অভিন্ন ইস্যুগুলোর কার্যকর সমাধানের মাধ্যমে সবাই একসঙ্গে উন্নয়ন সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য হলো, কোনো একক দেশ উন্নত হলে চলবে না। আশপাশের সব দেশের মানুষের উন্নয়ন হতে হবে। তাহলেই উন্নয়ন সার্থক চিরস্থায়ী হবে। এটা নিয়ে সবাই তার সঙ্গে একমত। সেখানে তিনি বলেছেন, ২০৪১ সালে আমরা একটা উন্নত দেশ হতে চাই। জানি যে আমরা একা পারব না। আপনাদের সহযোগিতা অংশীদারিত্ব লাগবে। তারা তাতে রাজি হয়েছেন। বিশেষ করে ভারত বলছে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা আপনাদের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে এক আছি। আপনাদের যেকোনো কাজে আমরা সহায়তা করব। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটা বিশেষ প্রস্তাবও দিয়েছেন। বলেছেন, অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে একটা ইকোনমিক সামিট হোক। এতে আমাদের কাজকর্ম আরো বেড়ে গেছে। চ্যালেঞ্জও বেড়ে গেছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগামী ৫০ বছর মাথায় রেখে ৫৪টি অভিন্ন নদী সচল রাখার জন্য টেকসই ব্যবস্থাপনার কথা বলেছি। তিনি তাতে সায় দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় আরেকটা বিষয় তুলে ধরেছেন, তা হলো শান্তি। শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না। সেজন্য এলাকায় একটি পিস ক্যাম্পেইন গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তার সে প্রস্তাব সবাই গ্রহণ করেছেন। এশীয় অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন শান্তি রক্ষায় শেখ হাসিনার উদ্যোগ দূরদর্শী পরিকল্পনার কথা জেনে সবাই খুশি হয়েছেন। নিজের প্রজ্ঞা দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই শেখ হাসিনা এখন একজন অনন্য লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। লিডারশিপ পাওয়ার কারণে আমাদের দায়দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। আমাদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি অন্যান্য দেশের প্রত্যাশাও বেড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণের যতগুলো ক্রাইটেরিয়া ছিল, আমরা সবগুলো উত্তরণ করতে পেরেছি। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সর্বশেষ বৈঠকে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সিডিপির এলডিসি-সংক্রান্ত উপগ্রুপের প্রধান টেফেরি টেসফাসো এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। চূড়ান্ত সুপারিশের ফলে ২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

 

. কে আব্দুল মোমেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন