দিনে দিনে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে ভারতের করোনা পরিস্থিতি। দেশটিতে গতকাল সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য কমেছে। যদিও মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে দেশটি। বস্তুত দেশটি সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে আগের সব রেকর্ড প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে। এ অবস্থায় ভারতজুড়ে লকডাউনের দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে দেশটির কোনো কোনো রাজ্য এরই মধ্যে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ৭৮ জনের, এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। সংক্রমণের সংখ্যা কমলেও করোনায় মৃতের সংখ্যায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে দেশটি। এ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৭ জনের। আগের দিন দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯১৫। বর্তমানে দেশটিতে করোনায় মৃতের নিশ্চিতকৃত সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ছুঁই ছুঁই। তবে প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে অভিমত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এছাড়া তাদের আশঙ্কা, দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা এখনো চূড়ায় পৌঁছেনি। এ সংখ্যা চূড়ায় পৌঁছতে সময় লেগে যেতে পারে মের শেষ পর্যন্ত। গোটা ভারতেই এখন হাসপাতালের মর্গ ও শ্মশানে শবদেহের চাপ মারাত্মক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে কোনো কোনো জায়গায় স্থানীয় পার্ক বা গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে অস্থায়ী শ্মশান তৈরি করে মরদেহ দাহ করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতে করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রাণরক্ষায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় দেশটির মহামারীকালীন ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ সমালোচিত হচ্ছে নয়াদিল্লি। অভিযোগ উঠছে, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং অক্সিজেন ঘাটতি মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও নরেন্দ্র মোদির সরকার বলছে, কেন্দ্র থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা ভারতেই সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে। কয়েকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ভারতব্যাপী লকডাউনের দাবি তুলছেন দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধী। তার আশঙ্কা, এর অন্যথায় বর্তমান পরিস্থিতি ভারতসহ অন্যান্য দেশের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
বর্তমানে নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো করোনা বিধ্বস্ত বড় শহরগুলো অক্সিজেনের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এর অধিকাংশই এসেছে অন্যান্য দেশ থেকে জরুরি সহযোগিতা হিসেবে। এছাড়া এসব শহরে এখন হাসপাতালের শয্যাসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি এখন মারাত্মক আকার নিচ্ছে দেশটির দক্ষিণের রাজ্যগুলোয়।
অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যগুলো করোনা মোকাবেলায় কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না। কেন্দ্রের অপেক্ষায় না থেকে কোনো কোনো রাজ্য এরই মধ্যে কঠোর লকডাউন জারির ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল থেকেই গোটা রাজ্যে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে তামিলনাড়ু। এতদিন পর্যন্ত রাজ্যটিতে আংশিক লকডাউন থাকলেও আগামীকাল তা রূপ নেবে পরিপূর্ণ শাটডাউনে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যটিতে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণে পৌঁছতে পারে।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তামিলনাড়ুতে এরই মধ্যে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিয়ে অনেক বড় সংকট দেখা দিয়েছে। চেন্নাইয়ের উপকণ্ঠের এক হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ১৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তামিলনাড়ু এখন ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে। রাজ্যটি বর্তমানে বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পের বড় একটি হাবে রূপ নিয়েছে। বিএমডব্লিউ, ডেইমলার, হুন্দাই, ফোর্ড, নিশান, রেনল্টসহ বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পের বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান এখানে উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে।
লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটক ও কেরালাও। গত শুক্রবার থেকে পরিপূর্ণ লকডাউনে রয়েছে কর্ণাটক। রাজ্যটির রাজধানী বেঙ্গালুরু টেক হাব হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। গুগল, অ্যামাজন ও সিসকোর মতো বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বড় কয়েকটি জায়ান্টের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও রয়েছে এখানে।
নাগরিকদের করোনা প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে মারাত্মক হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ভারত। যদিও বৈশ্বিক টিকা উৎপাদনে দেশটির অবস্থান শীর্ষে। এ পর্যন্ত ভারতে কভিডের টিকা উৎপাদন হয়েছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডোজ। যদিও দেশটিতে বর্তমানে টিকা বিতরণ কার্যক্রম ক্রমেই গতি হারাচ্ছে। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ শতাংশ নাগরিকের পূর্ণ দুই ডোজ করোনার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে ভারত।
