মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প

প্লাবনভূমি‌ ভরাট ক‌রে সংযোগ সড়ক নির্মাণ!

শামীম রাহমান

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মাণ করা হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর কেন্দ্রটিতে যাতায়াতের জন্য আলাদা আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হচ্ছে সংযোগ সড়ক। উপকূলীয় কুহেলিকা নদীর প্লাবনভূমির ওপর  সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণে নদীর প্রবাহ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠার পাশাপাশি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিবেশ অধিদপ্তর। সড়কটি নির্মাণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে ডিও লেটার পাঠিয়ে কাজ বন্ধও করে দেয়া হয়। তবে গত বুধবার থেকে ফের সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করেছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

সরকারের অন্যতম ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। জাইকার অর্থায়নে ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)

অন্যদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াত সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে পৃথকভাবে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সওজ অধিদপ্তর। প্রকল্পের মাধ্যমে দশমিক ৪৮ কিলোমিটার চার লেনের নতুন সড়ক দশমিক শূন্য কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন/রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কুহেলিকা নদীর ওপরে ৬৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৬৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০৪ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ১৫৫ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন করে যে সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার সাড়ে ছয় কিলোমিটার থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশটি নিয়েই বিপত্তি বেঁধেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, অংশটি কুহেলিকা নদীর প্লাবনভূমি। সেখানে জোয়ারের পানি উঠে প্লাবিত হয়। প্লাবনভূমির ওপর সড়ক নির্মাণ করায় নদীর প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি সেখানকার জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি উল্লেখ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে একটি ডিও লেটার পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংযোগ সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

এদিকে সওজ অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, নদীর যে পাশে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার অন্য পাশে ড্রেজিং করে কুহেলিকা নদীর প্রশস্ততা বাড়ানো হবে এবং নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হবে। তবে সওজ অধিদপ্তরের দাবি নিয়েও আপত্তি তুলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সংস্থটি বলছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছিল সওজ অধিদপ্তর। ওই সময় নদীর পাশে প্লাবনভূমি ভরাটের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। পরে পুরোপুরি অনুমোদিতভাবে সেখানে ভরাটের কাজ করেছে সওজ অধিদপ্তর।

এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সওজ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সড়কের নির্মাণকাজটি বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়। সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা হওয়ার আগ পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়।

কুহেলিকা নদীর প্লাবনভূমি ভরাট করে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে জানতে একাধিকবার সেলফোনে কল এসএমএস করেও প্রকল্প পরিচালক (সড়ক জনপথ অধিদপ্তর অংশ) ফজলে রব্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পরে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যোগাযোগ করা হয় সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুরের সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য যে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটির বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আপত্তি তুলেছিল। তাদের আপত্তির কারণে সড়কটির নির্মাণকাজও বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বুধবার থেকে আবার নির্মাণকাজ শুরু করেছি। এখন আর সেখানে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

সওজ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শুরু হয়ে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সড়কের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ শতাংশ। একইভাবে কুহেলিকা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ এগিয়েছে ৩৫ শতাংশ। আর প্রকল্পের ডিজাইন সুপারভিশন পরামর্শক কাজ এগিয়েছে ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে প্রকল্পটি আওতায় এরই মধ্যে কক্সবাজারে সওজ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, আগামী বছরের জুনে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন