চাঙ্গা হয়ে উঠছে মার্কিন গ্যাস রফতানির বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

চাঙ্গা হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রফতানির বাজার। এপ্রিলে ইউরোপে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেক্সিকোয় গ্যাস উত্তোলন কমায় রফতানিতে প্রবৃদ্ধি আসতে শুরু করে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস রফতানি কেন্দ্রগুলোতে প্রবাহিত এলএনজির পরিমাণ ছিল হাজার ১২০ কোটি ঘনফুট। এটি মাসভিত্তিক হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবাহের রেকর্ড ছিল। এপ্রিলে রফতানি কেন্দ্রগুলোতে এলএনজির পরিমাণ ওই রেকর্ড ভেঙে হাজার ১৫০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছে। খবর রয়টার্স।

এপ্রিলে মেক্সিকোয় পাইপলাইনের মাধ্যমে মার্কিন গ্যাস রফতানির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন গড়ে ৬১০ কোটি ঘনফুট। মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৫৯০ কোটি ঘনফুট। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি ঘনফুট।

জ্বালানিসংশ্লিষ্টদের মতে, এলএনজি রফতানিকারকদের জন্য প্রধান বাজার এশিয়া। বিদ্যুৎ অন্যান্য জ্বালানি পণ্য উৎপাদনে সম্প্রতি মহাদেশটিতে কয়লার পরিবর্তে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দশকের মধ্যেই পুরোপুরি গ্যাসনির্ভরতার দিকে ঝুঁকবে এশিয়ার শিল্প-কারখানাগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনকারীদের জন্য সমস্যার বিষয় হলো, কেবল তারাই নয়, বরং অন্যান্য দেশও এলএনজি রফতানিতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি পরিসংখ্যানবিষয়ক সংস্থা এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, এলএনজি পাইপলাইনযোগে রফতানি ২০২১ ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়বে।

এলএনজি রফতানির দিক থেকে ২০১৬ থেকে প্রতি বছরই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইআইএর পূর্বাভাস বলছে, দেশটির বার্ষিক এলএনজি রফতানির পরিমাণ ২০২১ সালে গড়ে দৈনিক ৮৫০ কোটি ঘনফুটে এবং ২০২২ সালে গড়ে দৈনিক ৯৫০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছবে, যা ২০২০ সালের ৬৫০ কোটি ঘনফুটের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানান, এলএনজির বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে কাতার। বর্তমানে এলএনজির বাজারে রাজত্ব করছে দেশটি। বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক কাতারের এলএনজি উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে কাতার। এরই মধ্যে এলএনজি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ঘোষণা কাতারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

এদিকে ২০১৫ সালের পর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস রফতানিও একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। ইআইএর পূর্বাভাস বলছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে ২০২১ সালে দেশটির বার্ষিক গড় রফতানির পরিমাণ ৯০০ কোটি ঘনফুট এবং ২০২২ সালে ৯২০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছবে। ২০২০ সালে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রফতানির পরিমাণ ছিল ৭৯০ কোটি ঘনফুট।

২০১৭ সালে এলএনজি পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রফতানির ক্ষেত্রে নিট রফতানিকারকদের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে পাইপলাইনের মাধ্যমে রফতানি হওয়া বেশির ভাগ গ্যাসের গন্তব্য মেক্সিকো। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে যতটা গ্যাস রফতানি করা হয় তার চেয়ে বেশি গ্যাস কানাডা থেকে আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।

ইআইএর দেয়া তথ্যমতে, গত বছর কানাডায় পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগে ২০১৯ সালে কানাডায় প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রফতানি করেছিল দেশটি। অন্যদিকে গত বছর কানাডা থেকে দেশটির পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৬৯০ কোটি ঘনফুট। ২০০৭ সালে আমদানির পরিমাণ সর্বোচ্চ প্রতিদিন হাজার ৪০ কোটি ঘনফুট ছিল।

গ্লোবালডাটার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল নাগাদ এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হবে যুক্তরাষ্ট্র। সময়ের মধ্যে দেশটিতে এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে বার্ষিক ১৫ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হবে, যা বৈশ্বিক মোট সক্ষমতার ৭৩ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন