কভিডের ধ্বংসাত্মক প্রভাব

কয়েক কোটি মানুষ দরিদ্র হতে পারে ভারতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ে অন্তত নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে ভারত। প্রতিদিন ভাইরাসটির সংক্রমণ মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য খাতের ওপর এমন চাপ অর্থনৈতিক খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘায়িত কভিড ঝড় মানুষের আয়কে সংকুচিত করেছে এবং সঞ্চয়কে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। মহামারীজনিত গত বছরের মন্দা কাটিয়ে ওঠার সময়ে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি দ্বিগুণ ধাক্কার মুখে পড়েছে। আর এতে নতুন করে ভারতের কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে পারে। খবর ব্লুমবার্গ।

সরকারের অনুমান অনুযায়ী, গত মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। এটি ১৯৫২ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় সংকোচন। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ক্রমহ্রাসমান সঞ্চয়ের কারণে অনেক অর্থনীতিবিদ চলতি বছর দেশটির জিডিপিতে দুই অংকের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমিয়ে আনছেন। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংয়ের এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান অর্থনীতিবিদ শন রোচ তার পূর্বাভাস ১১ শতাংশ থেকে দশমিক শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। বাজার অর্থনীতি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশনস চলতি বছর ভারতে দশমিক শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। এটা ব্লুমবার্গের দেয়া ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে কম।

করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের সর্বশেষতম প্রাদুর্ভাবে ভারতের মোট সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা হাজার ১৮৯ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই গত তিন সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে। গতকাল প্রথমবারের মতো দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। কয়েক দিন ধরে নতুন শনাক্তও হচ্ছে প্রতিদিন চার লাখের ওপরে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আগামী সপ্তাহগুলোয় সংকট আরো ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি মডেল জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ১০ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯ জন মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়েছে। এটা বর্তমানে দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মোট মৃত্যু লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ থেকে চার গুণ বেশি। প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশের কয়েকটি বৃহত্তম অর্থনৈতিক কেন্দ্রে নতুন করে যাতায়াত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে গত বছরের মতো দরিদ্ররা আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জিমল উন্নির গননা অনুযায়ী, ভারতের অর্থনীতির তথাকথিত অনানুষ্ঠানিক খাতে প্রায় ৪১ কোটি ১০ লাখ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছেন। ইউনিয়ন অরক্ষিত শ্রমিকরা প্রায়ই সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। প্রতিদিনের ব্যয় মেটানোর পর তাদের স্বাস্থ্যসেবা ওষুধের জন্য খুব সামান্যই অর্থ দেয়া হয়।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, পরিবারের সঞ্চয় হ্রাস আয় কমে যাওয়া গৃহস্থালি ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। আর এটা জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ। মুম্বাইভিত্তিক ব্রোকারেজ মোতিলাল ওসওয়াল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অর্থনীতিবিদ নিখিল গুপ্তের সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের গৃহস্থালি সঞ্চয় জিডিপির ২২ দশমিক শতাংশে নেমেছে। যেখানে গত বছরের জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে এটি মোট জিডিপির ২৮ দশমিক শতাংশ ছিল। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি প্রাইভেটের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের বেকারত্ব হার মার্চে দশমিক শতাংশ থেকে শতাংশের কাছাকাছি উন্নীত হয়েছে।

গত বছর শুরু হওয়া মহামারীর ধ্বংসাত্মক প্রভাবে ভারতে আয়ের বৈষম্য আরো গভীর হচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারীর শুরুর পর কোটি ৫০ লাখ ভারতীয় দরিদ্র হয়েছে। বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় আরো উদ্বেগজনক সংখ্যা উঠে এসেছে। মহামারীতে প্রায় ২৩ কোটি মানুষের আয় জাতীয় দৈনিক ন্যূনতম মজুরির সীমা ৩৭৫ রুপিতে পৌঁছেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন