রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা

জোড়া না থাকায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ হুমকির মুখে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রংপুর

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানায় একমাত্র উটপাখি সাতটি ডিম পেড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কিন্তু পুরুষসঙ্গী না থাকায় ডিমগুলো থেকে বাচ্চা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এদিকে সঙ্গীবিহীন প্রাণী বিশেষ করে বাঘ, ভালুক কেশোয়ারীর দিন কাটছে নির্জীবভাবে।

তবে জোড়া থাকায় গত চার মাসে গাধাঘোড়া, ময়ূর মদনটেকের নতুন অতিথি এসেছে চিড়িয়াখানায়।

রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, একমাত্র স্ত্রী উটপাখি গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে শুরু করে চার থেকে পাঁচদিনের ব্যবধানে মোট সাতটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে লকডাউনে বন্ধ থাকা সত্ত্বেও উত্সুক মানুষ ভিড় করেন চিড়িয়াখানায়। বিভিন্ন উপায়ে তারা বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। বুধবার চিড়িয়াখানার কর্মী চান মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একেকটি ডিমের ওজন কেজি ৪০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে বলে তিনি জানান। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীবিহীন প্রাণী বিশেষ করে একমাত্র স্ত্রী বাঘ, পুরুষ ভালুক, পুরুষ ইমু কেশোয়ারীর দিন কাটছে নির্জীবভাবে। চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ ২০০৩ সালের জুন জন্ম নেয়া একমাত্র স্ত্রী বাঘটির অবস্থা বর্তমানে সঙিন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সঙ্গীবিহীন থাকায় অবস্থা হয়েছে।  এদিকে সিংহের জোড়া থাকলেও বয়স্ক পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না কমবয়সী স্ত্রী সিংহ। তাই সিংহের প্রজননের আশা দেখছে না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত রংপুর চিড়িয়াখানায় হরিণের বাচ্চা প্রসব অব্যাহত আছে। এছাড়া এখানে জন্ম নেয়া বাঘের শাবক দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে পাঠানো হয়েছে কাতার সৌদি আরবে। জন্ম নেয়া সিংহের বাচ্চা নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেশের অন্য চিড়িয়াখানায়। কিন্তু প্রাণীগুলোর জোড়া না থাকায় বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৩৩ প্রজাতির ২৪৭টি জীবজন্তু আছে। রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানার জ্যু অফিসার ডা. এইচএম শাহাদৎ (শাহিন) বলেন, পুরুষ উটপাখি না থাকায় প্রাপ্ত ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া সম্ভব নয়। তিনি স্বীকার করেন, চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষা, গবেষণা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিনোদন। তিনি বলেন, বিনোদন পুরোপুরি পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে হাতেকলমে শিখতে আসছেন। তবে এখনো গবেষণা শুরু না হলেও খুব অল্প সময়ে তা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীর জোড়া না থাকায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ হুমকির মুখে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন। তবে জোড়া থাকায় গত চার মাসে গাধা, ঘোড়া, ময়ূর মদনটেকের নতুন অতিথি আসাকে তিনি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন। 

১৯৮৯ সালে নগরীর পুলিশ লাইন্সের পেছনে সাবেক হর্টিকালচারের ২১ দশমিক ৫১ একর জমিতে রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা কার্যক্রম শুরু হয়। এটি ১৯৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন