ইসলামপুরের পাইকারি বাজার ভরা মৌসুমে ক্রেতাশূন্য

আল ফাতাহ মামুন

গত বছরে ঈদের বাজার পুরোটাই ছিল করোনার দখলে। ঈদের কয়েক দিন আগে মার্কেট খুলে দিলে খুচরা দোকানে টুকটাক বেচাকেনা হয়। কিন্তু শূন্য ছিল পাইকারি বাজার। বছরও রোজার আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের প্রভাবে লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের দোকানপাট। গত ২৫ এপ্রিল থেকে দোকানপাট খুলে দিলে শুরুর দিন থেকেই মার্কেট-শপিংমলে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ক্রেতাশূন্য ছিল দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুর।

মোগল আমলে বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁর নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয়েছিল ইসলামপুর। ফল ব্যবসার জন্য বিখ্যাত এলাকায় প্রথম কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা শুরু হয় ১৭৭৩ সালে। সময়ের ব্যবধানে ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসা সদরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এখানে বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, গুলশান আরা সিটি, সাউথ প্লাজা, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, চায়না মার্কেটসহ ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪২টি মার্কেট রয়েছে। সেসব মার্কেটে দোকানের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

ইসলামপুর পাইকারি মার্কেটে দেশী-বিদেশী থান কাপড় থেকে শুরু করে থ্রিপিস, শাড়ি, লুঙ্গি, শিশুদের পোশাক, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড় ইত্যাদি পাওয়া যায়। তাছাড়া কাপড় তৈরির সব ধরনের সরঞ্জামও পাওয়া যায় এখানে। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বছরে ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় ইসলামপুরে, যার অর্ধেকই হয় রোজার মাসে ঈদ কেন্দ্র করে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ক্রেতাশূন্য ইসলামপুর মার্কেট খাঁখাঁ করছে। মায়ের দোয়া শাড়িবিতানের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ঘাটতি এবার পুষিয়ে নেয়ার টার্গেট ছিল। অবস্থাও অনুকূলে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ বেচাকেনার ভরা মৌসুমেই লকডাউনের জোয়ার আমাদের সব আশা-ভরসা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অন্য বছরগুলোতে সময় আমাদের দম ফেলারও ফুরসত মিলত না। কিন্তু এবার বেকার বসে আছি। এক-দুজন খুচরা ক্রেতা আসেন। ঘাঁটাঘাঁটি করে চলে যান।

এবারে মন্দা অবস্থার জন্য লকডাউনকেই বড় কারণ মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকজন প্রাচীন ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাইকাররা ঢাকায় ঢুকতে পারছেন না। তাছাড়া রোজার আগের লকডাউনই মূলত ইসলামপুরের ব্যবসা ডুবিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারের মূল বেচাকেনাই হয় রোজার আগে। লকডাউনের কারণে এবার তা হয়ে ওঠেনি। কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়ার আশায় দোকান খুলে বসে আছেন মালিকরা। বেচাবাট্টা না হওয়ায় খুচরা বিক্রি করেও ক্রেতা জমাতে পারছেন না।

জান্নাত ক্লথের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল আলম বলেন, অন্যান্য সময় যেখানে দৈনিক দেড়-দুই লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেখানে ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কি খুচরা বিক্রি করে পোষাতে পারেন?

বেচাকেনা না থাকায় কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ঠিকমতো পরিশোধ হবে কিনা নিয়ে শঙ্কা। বেশ কয়েকজন দোকান মালিক জানিয়েছেন, ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। দৈনিক খরচই উঠছে না। কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়া এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দুবাই বোরকা হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছরও ঋণ করে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিয়েছি। বছরও লোন নিয়ে এসব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের প্রণোদনা পাইনি। কভিডের কারণে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা কোনোমতে টিকে আছি, খুব একটা ভালো আছি বলা যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন