সুনামগঞ্জে বিধ্বস্ত সড়ক ও সেতু সংস্কার না করায় দুর্ভোগ

আল আমিন, সুনামগঞ্জ

গত বছর চার দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের ৬০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ সড়ক ছাড়াও জেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার যাতায়াতের প্রধান সড়কও রয়েছে। এখনো জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের। সড়কের নোয়াগাঁও এলাকায় ২০০ মিটার জায়গা পানির তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ধসে যায় সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ছাতক-দোয়ারাবাজারের সরাসরি যানচলাচল। প্রায় ১০ মাসেও ভেঙে যাওয়া ওই অংশ সংস্কার হয়নি। এতে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক লাখ মানুষের। হচ্ছে না পণ্য পরিবহনও। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ভেঙে ভেঙে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে আনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মালামাল। দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন জুলাইয়ে পরপর চার দফা বন্যার কবলে পড়ে সুনামগঞ্জ জেলা। পানির তোড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় আঞ্চলিক সড়কগুলোর। জেলায় এলজিইডির অধীনে সড়ক আছে হাজার ৬৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে চার দফা বন্যায় ২২টি সড়কে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। একই সঙ্গে ৪০টি সেতুর সংযোগ সড়ক রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ২২টি স্থান বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এর মধ্যে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কসহ বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষজনকে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের। সড়কের নোয়াগাঁও এলাকায় ২০০ মিটার জায়গা পানির তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার সরাসরি যানচলাচল। 

স্থানীয় নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কয়েস মিয়া বলেন, গত বন্যায় সড়কটি ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সড়ক সংস্কার হয়নি। সংস্কার না হওয়ায় সরাসরি যানচলাচল করতে পারে না। ছাতক-দোয়ারাবাজারে মানুষ সরাসরি জেলা সদরে যেতে পারছেন না। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার মানুষসহ যাত্রীরা।

রুমানা পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী এখলাছুর রহমান রাজু বলেন, ছাতক-দোয়ারাবাজার এলাকায় পোলট্রি মোরগের খাবারের (ব্রয়লার) ডিলারশিপ ব্যবসা করেন। দুই উপজেলার শ্যামলবাজার, কাটাখালী বাজার, মঙ্গলপুর, দোহালিয়া, আমবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্রয়লারের মালামাল পোলট্রি মোরগ বিক্রি করতে হয়। ঢাকা থেকে মালামাল শ্যামল বাজারে আনতে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এসব পণ্য পরিবহন করতে হয়। নোয়াগাঁওয়ে ভাঙন না হলে কম খরচে ঢাকা থেকে গাড়ি দিয়ে সরাসরি মালামাল নিয়ে আসতেন কিন্তু এখন কোনো জায়গায় শ্রমিক আবার কোনো জায়গায় গাড়ি দিয়ে দ্বিগুণ খরচে মালামাল এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। শুধু এখলাছুর রহমান রাজু নয়, আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা ভাঙনের কারণে পড়েছেন নানা সমস্যায়। বন্যায় ভেঙে যাওয়া সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, বন্যায় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতকসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। এর মধ্যে দোয়ারাবাজারের কাটাখালী এলাকার নোয়াগাঁও অংশে ২০০ মিটার সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে একটি সেতু ছিল, সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। যেভাবে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে সড়ক নির্মাণ করলে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এলজিইডি হেডকোয়ার্টার থেকে এক্সপার্টরা কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা পরিদর্শন করেছেন। এক্সপার্টরাসহ আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে নোয়াগাঁও এলাকায় একটি সেতু সড়ক নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে প্রাক্কলন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন