ভিসিপিয়াবের গোলটেবিল আলোচনা

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে কর অব্যাহতির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী-পরবর্তী পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল স্টার্টআপের জন্য বিনিয়োগ অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অল্টারনেটিভ ফান্ড ম্যানেজারদের জন্য কর অব্যাহতি চায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) এছাড়া বিনিয়োগ নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তহবিল গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল সংগঠনটি আয়োজিত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড স্টার্টআপস ফর পোস্ট-কভিড রেসিলিয়েন্ট ইকোনমি শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনা থেকে আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক . শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। ভিসিপিয়াব সভাপতি শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল স্টার্টআপ খাতকে সহযোগিতা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমরা যৌথভাবে এমন পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা করছি, যেখানে স্টার্টআপগুলো সত্যিকারভাবে টিকে থাকতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরিতেও কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, স্টার্টআপে বিনিয়োগ বাড়াতে যথাযথ নিয়মে শেয়ারবাজারে স্টার্টআপগুলোকে আনতে আমরা প্রতিনিয়তই নতুন আইন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছি। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে স্টার্টআপগুলো উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল ব্যবহার করে। শেয়ারবাজারে সম্পৃক্ত এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা এসব ব্যবসাকে সহযোগিতার জন্য কাজ করে যাচ্ছি, যাতে তারা দেশের অর্থনীতিতে সর্বাধুনিক উদ্ভাবন নিয়ে আসতে পারে।

আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট তৈরিকারী ব্যবসায় উদ্যোগী হবেন বলে মনে করেন ভিসিপিয়াব সভাপতি শামীম আহসান। তিনি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ জনগণ এসব কোম্পানি থেকেই পণ্য সেবা গ্রহণ করবেন। এটি আমাদের কভিড-১৯-এর মতো মহামারীতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হতে এবং একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরিতে সহায়তা করবে। এই ইমপ্যাক্ট ইকোসিস্টেমকে সহায়ক নীতিমালা ট্যাক্স ছাড়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটাতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সংস্থা যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক . শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে নতুন স্টার্টআপ ব্যবসা তৈরিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। স্টার্টআপগুলোকে শুধু যেসব শহরে প্রযুক্তির সমৃদ্ধি রয়েছে, সেসব শহর আর উচ্চশিক্ষিত সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর কাছে সেবা পৌঁছালে হবে না। এর পরিবর্তে তাদের ব্যবসায়ে ভিন্নতা আনতে বিকেন্দ্রীয়করণ করতে হবে। অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে হবে।

স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালকে বর্তমান নীতিমালার অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ পরিমাণ সহায়তা দেবে বলে জানান ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঋণ সুবিধার জন্য বাজারে চাহিদা তৈরি হয়েছে। এজন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যাংকিং খাতকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, আজকের স্টার্টআপগুলোই বাংলাদেশে আগামী দশকের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সরকার প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমবর্ধমান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় বাজারে স্টার্টআপগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) নির্বাহী সদস্য সুজয় মহাজন বলেন, স্টার্টআপগুলো স্থানীয় বাজার থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এটি নির্দেশ করে যে, দেশে তহবিল ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। সরকার ব্যাংকগুলোকে নীতিমালা তৈরি করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্থানীয় স্টার্টআপগুলোর জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে, যাতে তারা আর্থিক সমস্যা দূর করতে পারে।

২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে সিএমজেএফের সঙ্গে যৌথভাবে গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ভিসিপিয়াব। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো অংশ নেন সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক মুনির হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত, সিফ বাংলাদেশ ভেঞ্চারস এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসিফ মাহমুদ, মাইক্রোসফটের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অংশীদার কর্মকর্তা আনহ ফাম, সহজের এমডি মালিহা কাদির, ভিসিপিয়াবের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন, চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম, বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের এমডি শফিক-উল-আজম, মাসলিন ক্যাপিটালের এমডি হাফিজ, অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এমডি কেএইচ আসাদুল ইসলাম, অ্যাথেনা ভেঞ্চার্সের এমডি মাহবুব এইচ মজুমদার, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জাভেদ নূর, অ্যাথেনা ভেঞ্চার্সের চিফ অপারেটিং অফিসার মাহাদি হাসান বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের আনোয়ার জাহিদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন