আইসিএবির বাজেট আলোচনায় বক্তারা

অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বৈধ করদাতারা কর দেয়া বন্ধ করবে। সুযোগের কারণে অর্থনীতিতে লাভ-ক্ষতির একটি তুলনামূলক চিত্র থাকতে হবে। আসন্ন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হিসাবের চেয়ে করোনা মোকাবেলাকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনার সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।

গতকাল ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রত্যাশা শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা . মসিউর রহমান। আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আলোচনায় ভোক্তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানমুখী বাজেট প্রণয়ন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো তা যথাযথভাবে ব্যয় করা, ভোক্তার চাহিদা ধরে রাখা, কর্মসংস্থান উৎপাদনকে গুরুত্ব দেয়া, অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত টিকা কার্যক্রমকে গতিশীল করা এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা, কর কাঠামোর ব্যাপক সংস্কার, করহার কমানো, ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করার প্রস্তাবও উঠে আসে।

. মসিউর রহমান বলেন, আমাদের বেশকিছু জায়গাতে প্রণোদনা দেয়া দরকার ছিল। সেখানে হয়তো যৌক্তিক সময়ে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের কর ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ের পরিবর্তে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়া, ঘাটতি অর্থায়ন বাড়ানো এবং লক্ষ্যে বিদেশী উৎস থেকে তহবিলের জোগান দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি শেয়ার বন্ড মার্কেটে সংস্কারের বিষয়টিও তার আলোচনায় উঠে আসে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সব জায়গাতে সরকারের প্রণোদনা থাকলেও নেই শুধু শিক্ষা খাতে।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, ভোক্তার ব্যয় বা ভোগ ব্যয় ধরে রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। ভোগ পড়ে গেলে উৎপাদন কমে যাবে, ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্য ভোগ ব্যয়কে উৎসাহিত করতে বাজেটে উদ্যোগ নেয়া দরকার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক . আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী বাজেটে করোনার টিকার জন্য বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেন। সেটি প্রথম দিন থেকেই বাস্তবায়ন করা যায়। বাজেটে ঘাটতি থেকে শতাংশ করা, আদায়যোগ্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা, প্রণোদনায় এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো . মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালো টাকার সুযোগ দেয়ার ফলে অর্থনীতিতে কী পরিমাণ টাকা আসছে এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তা হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বাজেট বিশেষত স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, বিদেশী সহায়তা কাজে লাগানো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিভিন্ন বিভাগের সংস্কার কার্যক্রমকে দ্রুততর করা, পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

ঢাকা চেম্ব্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান আগামী তিন বছরে কোম্পানির করহার ধাপে ধাপে সাড়ে শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেন। এটি কমানোর পর যে করহার হবে, তা- বৈশ্বিক গড় করপোরেট হারের তুলনায় বেশি। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে সরকার কর পেয়েছে মাত্র ১২০ কোটি টাকা। ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো সাদা করা ঠিক হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যদি ৩২ শতাংশ কর দিই, তাহলে কালো টাকার ক্ষেত্রে এর ওপর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা থাকতে হবে। নাহলে আমরা আগামীতে কর দেয়া বন্ধ করে দেব।

অবৈধ পথের আয়কে বৈধ না করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে চুরি-ডাকাতির টাকাকে সাদা করবেন না। এতে কেউ সমর্থন দেবেন না। ঢালাও সব খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না দিয়ে স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগে গুরুত্ব দেন তিনি।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা হচ্ছে। আর আমি সাড়ে ৩২ শতাংশ কর দিই। আমরা যখন কর ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে কথা বলি, সেটা গুরুত্ব দেয়া দরকার। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। আমাদের করের টাকা ফুটো ট্যাংকে চলে যাচ্ছে। আমরা আমাদের বৈধ আয় কোথায় ব্যয় করব, সেটা নিয়ে অন্যদের কথা না বললেও চলবে। রাজনীতিবিদ আমলাদের সহযোগিতায় যারা দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের দিকে নজর দেয়া দরকার। এছাড়া প্রণোদনা পাওয়ার পর কেন উদ্যোক্তারা কর্মী ছাঁটাই করছে, সেটি দেখতে হবে।

আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মাহমাদুল হাসান খসরু দেশে জিডিপির তুলনায় রাজস্বের হার কম হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে এনবিআরের সঙ্গে আইসিএবির সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করে কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন যাচাইয়ের (ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিভিএস) বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন