এএমআর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

বিশ্ববাসীকে সাত পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভবিষ্যতে করোনা মহামারীর চেয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হতে পারে বলে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাতটি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অন ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ-এর দ্বিতীয় সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেয়া ভাষণে আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ধারণকৃত ভাষণ অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারীটি আমাদের সময়ের সংজ্ঞায়িত জনস্বাস্থ্য সংকট, যা এরই মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি লোকের জীবন নিয়েছে। তবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) আকারে আসন্ন মহামারীটি বিশ্ব স্বাস্থ্যের আরো বেশি ক্ষতিসাধন করবে।

বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে সরকারপ্রধান বলেন, অ্যান্টি ড্রাগ প্রতিরোধ কেবল মানব, প্রাণী উদ্ভিদের স্বাস্থ্যকেই বিপন্ন করবে না, পাশাপাশি তা খাদ্য সুরক্ষা এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জনের অগ্রগতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। অ্যান্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ভৌগোলিক অবস্থান এবং আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

এএমআর সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৫ এবং এএমআরতে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ঘোষণা-২০১৬ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী এএমআরের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিশ্বব্যাপী কৌশলগুলো সহযোগিতামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে কার্যকর করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), খাদ্য কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথের (ওআইই) চলমান প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও বার্তায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্ষতির বিষয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে -সংক্রান্ত সাতটি পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কন্টেইনমেন্টের (এআরসি) লক্ষ্য অর্জনের জন্য বৈশ্বিক, আঞ্চলিক জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সমীক্ষা তদারকির পাশাপাশি প্রতিবেদনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। কার্যকর অন্তর্ভুক্তিমূলক এএমআর নজরদারি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালগুলোর যথাযথ ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রযুক্তিগত সহায়তা ভাগ করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্তরে নীতি নীতি বিকাশের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মালিকানা ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধায় ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বল্প মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এএমআর-নির্দিষ্ট এএমআর-সংবেদনশীল কর্মের জন্য পর্যাপ্ত টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করার পক্ষে মতামত দেন। এছাড়া এএমআর প্রতিরোধে বিনিয়োগের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাশ্রয়ী টেকসই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কাভারেজের ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশীয় স্তরে কার্যকর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছয় বছরের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা এবং এআরসিতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় অসংখ্য উদ্যোগ নিয়েছে। মানব স্বাস্থ্য, গবাদি পশু, মৎস্য কৃষি খাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন