করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত

হাসপাতালে কভিড-১৯ শয্যা সংকটের পথে মালয়েশিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে কভিড-১৯-এর ভারতীয় ধরন বি..৬১৭। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ভারতীয় নাগরিকের দেহে এটি শনাক্ত হয়েছে। তবে করোনার ভারতীয় ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশটির হাসপাতালগুলোতে কভিড-১৯-এর শয্যাগুলো প্রায় পূর্ণই ছিল। মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট আগামী দিনগুলোতে আরো তীব্র হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ভারতীয় ধরনটি করোনার অন্যান্য ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক।

মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কভিডের বিভিন্ন ধরন দ্রুতই ছড়াচ্ছে দেশটিতে। কিছুদিন আগেও মালয়েশিয়ায় ১০ জনের মধ্যে কভিডের সাউথ আফ্রিকান বি..৩৫১ ধরন শনাক্ত হয়েছিল, যা বর্তমানে বেড়ে ৪৮ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে শনাক্ত হওয়া যুক্তরাজ্যের বি... ধরন তিনজন আক্রান্ত থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে।

দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নুর হিসাম আব্দুল্লাহ জানান, কভিডের নতুন ধরনগুলোতে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুও বাড়াচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা হাসপাতালগুলোয় কভিড-১৯ ওয়ার্ডের ৭০ শতাংশ এরই মধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। শুধু তা- নয়, নন-কভিড ওয়ার্ডেরও ৮৮ শতাংশ শয্যায় রোগী অবস্থান করছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। মালয়েশিয়ার বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কুলজিত সিং জানান, এরই মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রায় সব শয্যা রোগীতে পূর্ণ রয়েছে। বিগত ১৪ দিনে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এসব হাসপাতালে কভিডের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডের সব শয্যা রোগীতে পূর্ণ। এমনকি কভিডের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যাগুলোও ক্রমেই পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

কুলজিত সিং জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারি হাসপাতালের মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই। এর পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালের কারণে নন-কভিড রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করে সেখানে কভিডের শয্যা বাড়ানো সম্ভব।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরো ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। নিয়ে মালয়েশিয়ায় করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে মোট হাজার ৫৭৪ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে হাজার ১২০ জন। এতে  মালয়েশিয়ায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল লাখ ২০ হাজার ৬৩২। গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি চালু করে। মালয়েশিয়া সরকার এক বছরের মধ্যে কোটি ২০ লাখ মানুষের ৮০ শতাংশকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার সিলানগরের ছয় জেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এমসিও) কার্যকর হচ্ছে। ছয়টি জেলা হলো হুলু লাঙ্গাত, পেটালিং, গোম্বাক, ক্লং, কুয়ালা লঙ্গাত সেপাং। বাকি তিনটি জেলা কুয়ালা সেলেঙ্গর, সবাক বার্নাম উলু সেলেঙ্গার শর্তাধীন আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ আদেশের (সিএমসিও) অধীনে থাকবে। মালয়েশিয়ার সিনিয়র সুরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব এক সংবাদ সম্মেলনে কথা জানান। সম্প্রতি রাজ্যে কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আদেশ জারি করা হয়। এর আগে গত রোববার মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আধাম বাবা জানান, ভারতের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশটিতে একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আমরা জনসাধারণকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব জনস্বাস্থ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাতে রয়টার্স জানায়, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ভারতীয় নাগরিকের দেহে এটি শনাক্ত হয়েছে। তবে ভ্যারিয়েন্টটি কবে শনাক্ত হয়েছিল তা তিনি জানাননি।

প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত আছেন, যাদের বড় অংশই শ্রমিক। অনেকেই আবার ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। তবে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে বিপাকে রয়েছেন শ্রমিক এবং ছোটখাটো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসা কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটিতে যান ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যান প্রায় লাখ ৭৬ হাজার। তবে গত প্রায় দুই বছর ধরে কর্মী রফতানি প্রায় বন্ধ রয়েছে মালয়েশিয়ায়। শ্রমবাজারটি চালু করতে নিয়মিত বিরতিতেই বৈঠক হচ্ছে দুদেশের মধ্যে। তবে এজেন্সি নির্ধারণ জটিলতা, কভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এখনো চালু করা যায়নি দেশটিতে কর্মী রফতানি। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন