করোনায় চলাচলে বিধিনিষেধ

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে বুকিং চাপে ব্যক্তিগত গাড়ি

আল ফাতাহ মামুন

করোনা সংক্রমণ রোধে ১৬ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে সরকার। সময় সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চললেও দূরপাল্লার বাস, ট্রেন লঞ্চ বন্ধ থাকবে। এছাড়া শিল্প-কারখানায় ঈদুল ফিতরের ছুটি সরকার নির্ধারিত তিনদিনের বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে। এতকিছুর পরও ঘরমুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীর রেন্ট--কার সার্ভিসের মালিকরা বলছেন, ২৫ রোজা থেকে ঈদের পরদিন পর্যন্ত বেশির ভাগ গাড়িই বুকিং (অগ্রিম ভাড়াহয়ে গেছে। ভাড়া বেশি দিয়ে মানুষজন গাড়ি অগ্রিম ভাড়া করছে বলে জানিয়েছেন প্রাইভেটকার মালিক চালকরা।

পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে ৪০-৫০টি প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস নিয়ে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী রেন্ট--কারের ব্যবসা। আশপাশের মানুষজন গাড়ি ভাড়ার প্রয়োজন হলে এখানে এসে গাড়ি ভাড়া করে। আবার কোনো চালকের যাত্রী প্রয়োজন হলে এখানে এসে অপেক্ষা করলেই যাত্রী মিলে যায়। গতকাল দুপুরে একাধিক চালক জানান, ২৫ রমজান থেকে ঈদের পরদিন পর্যন্ত তাদের গাড়ি বুক হয়ে গেছে। আলমগীর নামে একজন চালক বলেন, প্রতি বছরই ঈদে প্রাইভেট গাড়ির ওপর অতিরিক্ত চাপ থাকে। এবার লকডাউন দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় আগেভাগেই গাড়ি ভাড়া করছেন মানুষ।

আরেকজন চালক ইমরান হাসান বলেন, এবার প্রচুর পরিমাণে বুকিং পাচ্ছি। এতে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। চালকরা বেশি লাভের লোভে একই দিনে চার-পাঁচটা বুকিংও নিচ্ছেন। কিন্তু একজন চালক তো একদিনে চার-পাঁচ জেলায় যেতে পারবেন না। এর মানে হলো তিনি কারো কথা রাখবেন, আর কাউকে ঠকাবেন।

রাজধানীর সায়েদাবাদে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস বন্ধের ঘোষণায় টার্মিনালের ভেতরই ব্যক্তিগত গাড়ি দরদাম করে মানুষজন গন্তব্যে যাচ্ছে। খোরশেদ আলম নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এখানে এসেছি গাড়ি বুকিং দিতে। ঈদের আগের দিন পরিবারসহ চট্টগ্রাম যাব। অন্য সময় ভাড়া চাইত হাজার টাকা। এবার ভাড়া চাচ্ছে ১৬ হাজার টাকা। দরদাম করে ১৪ হাজার টাকায় একটি গাড়ি বুক করেছি।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় আরেক যাত্রী মোমিনুলের সঙ্গে। রাজধানী সুপার মার্কেটের বিক্রয়কর্মী বলেন, এবার দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রাইভেটকারগুলো আগেভাগে বুকিং হয়ে যাচ্ছে। আমরা ১৫ জন মিলে একটি হাইএস গাড়ি ভাড়া করেছি। জনপ্রতি ভাড়া পড়েছে হাজার টাকা করে।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য ঘরমুখো মানুষের বুকিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাড্ডার গোধূলি রেন্ট--কারের একজন গাড়ির মালিক মো. খালেক বণিক বার্তাকে বলেন, আমার দুটি মাইক্রোবাস আছে। ২৭ থেকে ২৯ রমজান রাত পর্যন্ত প্রায় ২০০ বুকিংয়ের ফোন পেয়েছি। কিন্তু ওই সময়ে চালকরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না, তাই আমি এখনো কোনো বুকিং নিশ্চিত করিনি। তিনি বলেন, ঈদের সময় চালকদের কাছে মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েন। তারা ফোন বন্ধ করে ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। তাই বছর আমি আর কোনো বুকিং নেব না ঠিক করেছি। তার পরও ২৫ ২৬ রোজায় কিছু মানুষ বুকিং দিয়ে রেখেছে, তাদের পাঠাব।

মতিঝিলের মা রেন্ট--কারের চালক মো. শিমুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবারই ঈদের আগে চালকরা মালিকদের সঙ্গে একটু উল্টাপাল্টা করেন। ফলে বুকিং দেয়া যাত্রীরা ঠিকমতো গাড়ি পান না। কিন্তু বছর ধরনের সমস্যা ভয়ংকর আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন চালক। তিনি বলেন, এবার গাড়ি বুকিংয়ের হিড়িক পড়ায় মালিক-চালকরা চিন্তাভাবনা না করেই বুকিং নিয়ে ফেলছেন। পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত দিনে এর চেয়েও বেশি টাকায় যাত্রী পেলে বুকিং বাতিল করে বেশি টাকার যাত্রী নিয়ে নেবেন চালকরা। যারা গাড়ি বুকিং দিচ্ছেন, ব্যাপারটি তাদের মাথায় রাখা উচিত।

এদিকে গণপরিবহন নেতারা বলছেন, দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখার ফলে পরিবহন শ্রমিক এবং সাধারণ জনগণ দুই শ্রেণীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মাঝ থেকে লাভবান হচ্ছেন ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মালিকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এনায়েতুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার বাস বন্ধ রেখেছে যাতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মানুষ প্রাইভেটকার কাভার্ড ভ্যানে গাদাগাদি করে দূরপথে যাতায়াত করছে। ওইসব গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো হয়ই না, উল্টো বেশি ভাড়া গোনাসহ নানাভাবে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর চেয়ে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনেক ভালো পরিবেশ রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো পরিবহন যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাকে জরিমানা করা হোক, ডাম্পিং করা হোক। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হলে সবকিছুই সম্ভব। কিন্তু এভাবে বন্ধ রাখা তো কোনো সমাধান নয়। অবিলম্বে গণপরিবহন চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

কঠোর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) ইফতেখায়রুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে আমাদের যে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে অনুসারে আমরা ব্যবস্থা নেব। ঈদ উপলক্ষে আমাদের বাড়তি সতর্কতাও থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন