প্রতি বছর
পবিত্র রমজান
মাসে সামর্থ্যবান
মুসলমানরা জাকাত
আদায়ের চেষ্টা
করে থাকেন।
তবে সাধ্য
বা সামর্থ্য
থাকার পরও
অনেকেই জাকাত
পুরোপুরি বা
সঠিকভাবে আদায়
করেন না,
করতে পারেন
না, করতে
চানও না।
এর ফলে
সামগ্রিকভাবে সমাজে
জাকাতের যে
সুফল দেখা
দেয়ার কথা,
তাও আর
দৃশ্যমান হয়
না। সঠিকভাবে
জাকাত আদায়
না করার
একাধিক কারণ
আছে। জাকাত
সম্পর্কে সঠিক
ও স্পষ্টভাবে
জানাবোঝা না
থাকা হলো
প্রথম কারণ।
দ্বিতীয়টি হলো
জানাবোঝার পরও
দায়সারাভাবে জাকাত
প্রদানের মানসিকতা।
তৃতীয়টি হলো
জাকাত প্রদান
করার ক্ষেত্রে
ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি।
এছাড়া আরো
নানা কারণ
আছে।
জাকাত সম্পর্কে
ভালোভাবে জানাবোঝা
না থাকার
দরুন বাংলাদেশে
আমরা দেখি
যে কিছু
ধনাঢ্য বা
সচ্ছল মুসলমান
দোকান থেকে
জাকাতের কাপড়
বা শাড়ি-লুঙ্গি
কিনে এনে
তা গরিব
মানুষের মাঝে
বিলি করেন।
সেই সঙ্গে
এই কাপড়
নিতে গিয়ে
প্রতি বছরই
রমজান মাসে
কিছু মানুষকে
ভিড়ের চাপে
প্রাণ হারাতে
দেখি। জাকাতের
কাপড় বলে
কিছু নেই,
আর এভাবে
জাকাতের নামে
কাপড় বিতরণ
করে যে
সঠিকভাবে জাকাত
আদায় করা
হয় না,
তা অনেকে
এখনো জানেন
না বা
বোঝেন না।
অথবা জানলে-বুঝলেও
মানতে চান
না। তারা
এটাও মানতে
চান না
যে জাকাত
আর দান-দক্ষিণা
এক বিষয়
নয়, সঠিকভাবে
হিসাব-নিকাশ
ছাড়া জাকাত
আদায় হয়
না। সে
কারণে আরেক
শ্রেণীর মুসলমান
নিজেদের গৃহকর্মী
বা প্রতিষ্ঠানের
নিম্ন আয়ের
কর্মী বা
শ্রমিক-মজুরকে
তাদের প্রাপ্য
পারিশ্রমিকের সঙ্গে
বাড়তি কিছু
অর্থ যোগ
করে আদায়
হয়েছে বলে
তুষ্ট থাকেন। আবার
এমন ভুল
ধারণাও আছে
যে সরকারকে
আয়কর বা
ট্যাক্স দিলে
জাকাত দেয়ার
বোধ হয়
প্রয়োজন নেই।
বরং রাষ্ট্রের
কর ও
খাজনাদি পরিশোধ
করার পর
হাতে নিসাব
পরিমাণ সম্পদ
থাকলে জাকাত
প্রদান বাধ্যতামূলক।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ: জাকাত হলো
ইসলামের মৌলিক
পাঁচটি স্তম্ভের
অন্যতম। ইসলামের
পাঁচ স্তম্ভ
হলো ঈমান,
সালাত, সিয়াম,
জাকাত ও
হজ। প্রফেসর
সৈয়দ আলী
আশরাফ তার
‘ইসলাম’
(দ্য ইসলামিক
একাডেমি, কেমব্রিজ)
বইতে জাকাতের
ওপর আলোকপাত
করতে গিয়ে
লিখেছেন: ‘একজন
মুসলমান বিশ্বাস
করে যে
সবকিছুই আসলে
আল্লাহর মালিকানাভুক্ত।
আর তাই
কোনো ব্যক্তির
যাবতীয় সম্পদ
ও সম্পত্তি
হলো আমানাহ
(ন্যস্ত দ্রব্য
বা জিম্মা)।
একইভাবে এটাও
বিশ্বাস করতে
হয় যে
একজন ব্যক্তির
সমগ্র জীবন
ও এ
দুনিয়াতে যা
সে অর্জন
করে, তা
তাকে দেয়া
হয় আমাদের
পরকালের যাত্রার
জন্য। সে
কারণেই প্রত্যেক
মানুষের জন্য
তার কাছে
থাকা সম্পদ
থেকে নির্দিষ্ট
একটি অংশ
প্রত্যেক চন্দ্রবছর
শেষে গরিবদের
প্রদান করা
বাধ্যতামূলক। এ
বাধ্যতামূলক কাজটি
জাকাত নামে
পরিচিত। পবিত্র
কুরআন বারবার
সালাত ও
জাকাতের ওপর
গুরুত্বারোপ করেছে।
মহানবী (সা.)
এ বাধ্যবাধকতা
ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে বলেছেন:
‘আল্লাহ
জাকাতকে বাধ্যতামূলক
করেছেন তোমাদের
অবশিষ্ট ধনসম্পদ
পরিশুদ্ধ করার
জন্য।’ ....কারা
কারা জাকাত
পাওয়ার যোগ্য
তা পবিত্র
কুরআনে বলে
দেয়া হয়েছে
এবং মুহাম্মদ
(সা.) বিভিন্ন
সম্পত্তির ওপর
জাকাত প্রদানের
বিধিবিধান ব্যাখ্যা
করে গেছেন।...মুসলমানদের
জন্য জাকাতের
মূলনীতিগুলো হলো:
১. সম্পদ
যা মানুষের
ওপর ন্যস্ত
করা হয়
তা শুধু
তার নিজের
উপভোগের জন্য
নয়, বরং
সমাজের অন্য
গরিব সদস্যের
জন্যও। ২.
ধন-সম্পদ
মজুদ করা
যাবে না;
বরং তা
বিতরণ করতে
হবে যেন
সম্পদের প্রবাহ
ঘটে। ৩.
জাকাত প্রদানের
মাধ্যমে সম্পদশালী
ব্যক্তিরা তাদের
অবশিষ্ট সম্পদকে
নিজেদের জন্য
পবিত্র করে।
৪. জাকাত
প্রদানের মাধ্যমে
সম্পদশালীরা আল্লাহর
দয়া প্রাপ্ত
হয়। ৫.
জাকাত ধনী
ও গরিবকে
ভালোবাসা ও
সম্মানের বন্ধনে
আবদ্ধ করে।
কেননা যারা
জাকাত দেয়,
তারা গরিবের
প্রতি কোনো
অনুগ্রহ করে
না, বরং
জাকাত নিয়েই
গরিব ও
অভাবীরা ধনীদের
অনুগ্রহ করে।’
পবিত্র কুরআনে
সুরা তওবার
৬০ নম্বর
আয়াতে আট
ধরনের মানুষকে
জাকাত পাওয়ার
অধিকারী ঘোষণা
করা হয়েছে।
এরা হলো:
১. ফকির
বা নিঃস্ব,
২. মিসকিন
বা অভাবী,
৩. জাকাত
ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত
কর্মচারী, ৪.
যাদের মন
জয় করা
প্রয়োজন, ৫.
দাস যাদের
বন্দিত্ব থেকে
মুক্তি দরকার,
৬. ঋণগ্রস্ত,
৭. আল্লাহর
রাস্তায় (কল্যাণের
জন্য) এবং
৮. মুসাফির।
সৈয়দ আলী
আশরাফ আরো
লিখেছেন: জাকাত
কোনো রাষ্ট্রীয়
ট্যাক্স বা
কর নয়,
কেননা এর
ধরন ও
প্রদান পদ্ধতি
কুরআনে সুনির্দিষ্ট
করে দেয়া
হয়েছে। মুসলমান
ও অমুসলমান
বা ভিন্নধর্মীদের
জন্য আলাদা
রাষ্ট্রীয় কর
আরোপ করা
হয় এবং
সেই আদায়কৃত
করের অর্থ
রাষ্ট্রের বিভিন্ন
কাজে ব্যয়
করা হয়।
জাকাতের অর্থ
এসব কাজে
ব্যয় করা
যায় না।
কোনো মুসলিম
রাষ্ট্র শুধু
যে কাজটি
করতে পারে
ও করা
উচিতও বটে,
তা হলো
সম্পদশালী মুসলমানদের
কাছ থেকে
জাকাতের অর্থ
আদায় করে
তা পাওয়ার
যোগ্য ব্যক্তিদের
মধ্যে বিতরণ
করা। অবশ্যই
তা কুরআন
ও সুন্নাহর
নির্দেশনা অনুসারে
হতে হবে।
মুসলমানদের জাকাত
দিতে বাধ্য
করার চূড়ান্ত
লক্ষ্য হলো
তাদের মধ্যকার
অহংবোধ ও
ধনলিপ্সা ধ্বংস
করে দেয়া
এবং সব
সৃষ্টির মধ্যে
সংহতি সাধনের
চেষ্টা করা।
স্বাধীন, সুস্থ,
সচেতন, প্রাপ্তবয়স্ক
মুসলমান নর-নারী
যারা নিসাব
পরিমাণ বা
ইসলাম নির্ধারিত
ন্যূনতম সম্পদের
মালিক, তাদের
ওপর জাকাত
ফরজ বা
বাধ্যতামূলক। তাহলে
বোঝা গেল,
ধনী ও
সম্পদশালী মুসলমানের
বাড়তি সম্পদের
কিছু অংশ
বঞ্চিত, অভাবীদের
অবস্থার উন্নতি
ঘটানোর জন্য
নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যে বিতরণ
করতে হবে।
এভাবে একটা
পর্যায়ে অভাব
দূর হবে,
গরিবি হটে
যাবে ও
সমাজে একটি
সমতাপূর্ণ অবস্থা
তৈরি হবে।
এটাই জাকাতের
মূল উদ্দেশ্য।
সে কারণেই
হিসাব-নিকাশ
করে যথাসম্ভব
সঠিকভাবে জাকাত
দিতে হয়।
জাকাতের হিসাব-নিকাশ: এক কথায়
বললে, কোনো
মুসলমানের যদি
এক বছরান্তে
নিসাব পরিমাণ
সম্পদ হাতে
থাকে, তাহলে
সেই সম্পদের
চল্লিশ ভাগের
এক ভাগ
বা আড়াই
শতাংশ জাকাত
হিসেবে প্রদান
করতে হবে।
নিসাব পরিমাণ
সম্পদ বলতে
ন্যূনতম উদ্বৃত্ত
সম্পদের কথা
বোঝায়। নিসাব
নির্ধারণের দুটো
মান আছে।
একটি স্বর্ণমান,
অন্যটি রৌপ্যমান।
কোনো মুসলমান
ব্যক্তির কাছে
নিজের ও
পরিবারের জীবনধারণের
যাবতীয় ব্যয়ভার
ও দায়দেনা
মিটিয়ে বছর
শেষে (চন্দ্র
বছর বা
হিজরি বছর)
কমপক্ষে সাড়ে
সাত তোলা
(বা ভরি)
বা ৮৭.৫০
গ্রাম স্বর্ণ
কিংবা সাড়ে
৫২ তোলা
বা ৬১৩
গ্রাম রৌপ্য
হাতে থাকে,
তাহলে তা
নিসাব বা
জাকাতযোগ্য ন্যূনতম
সম্পদ হিসেবে
বিবেচিত হবে
(প্রতি ভরি
বা তোলা
১১.৬৭
গ্রাম ধরে।
গ্রামের হিসেবে
কিছু হেরফের
হতে পারে)।
বিষয়টা ব্যাখ্যা
করা যাক।
গত ১৭
এপ্রিল তারিখে
বাংলাদেশ জুয়েলার্স
সমিতি (বাজুস)
প্রকাশিত সোনা-রুপার
বাজারদর অনুসারে,
২১ ক্যারেট
সোনার দাম
প্রতি গ্রাম
৫,৬৫৫
টাকা। আবার
১১.৬৭
গ্রামে এক
তোলা বা
ভরি ধরলে
প্রতি ভরি
সোনার দাম
হয় ৬৫,৯৯৪
টাকা। একই
দিন ২১
ক্যারেট রুপার
দর প্রতি
গ্রাম ছিল
১২৩ টাকা।
তাহলে প্রতি
ভরি রুপার
দাম হয়
১,৪৩৫
টাকা। এ
বাজারদর বিবেচনায়
নিলে সাড়ে
সাত ভরি
সোনার দাম
হবে ৪,৯৪,৯৫৪
টাকা আর
সাড়ে ৫২
ভরি রুপার
দাম ৭৫,৩৫৯
টাকা। (হিসাবের
জটিলতা এড়াতে
ভগ্নাংশ বাদ
দেয়া হয়েছে)।
তবে এ
বাজারদর হলো
ক্রেতার ক্রয়মূল্য
আর দোকানের
বিক্রয়মূল্য। এ
দরকে প্রাক-নিসাব
বিবেচনা করতে
হবে। কেননা,
জাকাতদাতার কাছে
থাকা সোনা
বা রুপা
(সাধারণ গহনা
হিসেবে রক্ষিত)
বিক্রি করতে
গেলে সে
এই দাম
পাবে না।
বাংলাদেশে সাধারণত
কেউ সোনা
বা রুপার
অলংকার বিক্রি
করতে গেলে
দোকানদার বা
স্বর্ণকাররা প্রকৃত
ওজন থেকে
২০ শতাংশ
বাদ দিয়ে
দাম হিসাব
করে। মানে
বাজারদর থেকে
২০ শতাংশ
কম দামে
তা বিক্রি
করতে হয়।
তাই উল্লিখিত
সোনার ও
রুপার দাম
থেকে ২০
শতাংশ বাদ
দিলে সাড়ে
সাত ভরি
সোনার দাম
হয় ৩,৯৫,৯৬৩
টাকা আর
সাড়ে ৫২
ভরি রুপার
দাম হয়
৬০,২৮৭
টাকা যা
যথাক্রমে স্বর্ণমানে
ও রৌপ্যমানে
জাকাতের নিসাব।
দুই মানের
নিসাবে অনেক
বড় ব্যবধান
হয়ে যায়।
তাই স্বাভাবিকভাবেই
প্রশ্ন আসে
জাকাতদাতা কোন
মানটি অনুসরণ
করবে? ইসলাম
বিশেষজ্ঞদের কেউ
কেউ মনে
করেন, রৌপ্যমান
অনুসরণ করলে
জাকাতের পরিমাণ
বেড়ে যায়
এবং জাকাতগ্রহীতারা
বেশি জাকাত
পায়। এতে
করে জাকাতদাতার
সওয়াবও বেশি
হয়। আবার
কারো মত
হলো, রক্ষিত
সোনার ক্ষেত্রে
শুধু স্বর্ণমান
অনুসরণ করতে
হবে। বাকি
সব সম্পদে
রৌপ্যমান। অর্থাৎ
রুপার অলংকার
ছাড়াও ব্যাংকে
রাখা আমানত,
বন্ডে-শেয়ারে
বিনিয়োগকৃত অর্থ,
বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে
রাখা যেকোনো
সম্পদের বিক্রয়মূল্য
ইত্যাদি যোগ
করে দেখতে
হবে যে
রৌপ্যমানে নিসাবের
সমপরিমাণ হয়
কিনা। এগুলোর
বিক্রয়মূল্য নিসাবের
সমান বা
তার চেয়ে
বেশি হলো
পুরোটার ওপর
আড়াই শতাংশ
হারে জাকাত
প্রদেয়। তবে
বেশির ভাগের
মত হলো
যে সোনা,
রুপা ও
অন্যান্য জাকাতযোগ্য
সম্পদ যাই
থাকুক না
কেন, নিসাব
স্বর্ণমানে হিসাব
করে জাকাত
দিতে হবে।
অনেকে বিভিন্ন
ঐতিহাসিক দলিল
দেখিয়ে এও
বলছেন যে
নিসাবের ক্ষেত্রে
স্বর্ণমান অনুসরণের
বিষয়ে ইজমা
অনেক আগেই
হয়ে গেছে।
সুতরাং, এখানে
আর কোনো
বিভ্রান্তির অবকাশ
নেই। তাই
বলা যায়,
স্বর্ণমান অনুসরণ
করে নিসাব
নির্ধারণ করা
সবচেয়ে সঠিক।
যদি প্রতি
বছর সরকারিভাবে
বা সরকার-অনুমোদিত
কোনো কর্তৃপক্ষ
বিশেষজ্ঞ ও
আলেমদের সঙ্গে
পরামর্শ করে
ফিতরার মতো
নিসাব নির্ধারণ
করে দিত,
তাহলে হয়তো
কিছুটা সুবিধা
হতো। পাকিস্তানে
এ প্রথা
চালু রয়েছে।
যেমন পাকিস্তানের
জাকাত মহাপ্রশাসক
এ বছর
ঘোষণা করেছে
যে ১
রমজান তারিখে
যাদের ব্যাংক
হিসাবে কমপক্ষে
৮০ হাজার
৯৩৩ রুপি
(প্রায় ৫৩০
মার্কিন ডলার
বা ৪৪
হাজার বাংলাদেশি
টাকা) সঞ্চিত
আছে, তাদের
জন্য এই
অর্থ হলো
নিসাব এবং
এই অর্থের
ওপর আড়াই
শতাংশ হারে
জাকাত প্রদেয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে নিসাব
ঘোষণা করার
সুবিধা হলো
যে যারা
জাকাত প্রদান
করবে, তাদের
নিজ থেকে
আলাদাভাবে নিসাব
নির্ণয় করতে
হবে না।
অথবা করলেও
ঘোষিত টাকার
অংকের সঙ্গে
মিলিয়ে নিতে
পারবে। বাংলাদেশে
প্রতি বছর
ঈদুল ফিতরের
আগে যেভাবে
রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিতরার
পরিমাণ ঘোষণা
করা হয়,
সেভাবে জাকাতের
জন্য নিসাব
ঘোষণা করা
যায় কিনা
বা করা
ঠিক হবে
কিনা, এসব
ভেবে দেখা
যেতে পারে।
নিসাব নির্ণয়ের
ক্ষেত্রে অবশ্যই
প্রথমে জাকাতযোগ্য
সব অলংকার,
আর্থিক সম্পদ
ও অস্থাবর
সম্পত্তির বাজারে
বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ
করতে হবে।
ঘর-বাড়ি-জমি
ও গাড়ি
নিজে থাকা
ও ব্যবহারের
জন্য হলে
জাকাতযোগ্য নয়।
তবে বিক্রির
উদ্দেশে রাখা
হলে জাকাতযোগ্য।
তাই বিক্রয়মূল্য
বের করতে
হবে। সহজভাবে
বললে, এক
বছর শেষে
হাতে থাকা
ব্যয়যোগ্য সব
ধরনের সম্পদ
জাকাতযোগ্য। এক
বছর সময়কালের
মধ্যে আয়-ব্যয়
মিলিয়ে বছরের
শেষ দিনের
স্থিতিকে বিবেচনায়
নিতে হবে
যেমনটা আধুনিক
হিসাববিজ্ঞানে করা
হয়ে থাকে।
এভাবে সবকিছুর
বিক্রয়মূল্য জানার
পর সেই
টাকার অংক
থেকে ঋণ
বাদ দিতে
হবে। তাহলে
পাওয়া যাবে
প্রকৃত জাকাতযোগ্য
অর্থমূল্য। সেই
অর্থমূল্য নিসাবের
সমপরিমাণ বা
তার বেশি
হলে তার
ওপর আড়াই
শতাংশ হারে
জাকাত দিতে
হবে।
এখানে খেয়াল
রাখতে হবে
যে ইসলামী
বিধান অনুসারে
জাকাত চন্দ্রবছরের
হিসেবে প্রদেয়।
আর চন্দ্রবছর
সাধারণত হয়
৩৫৪ দিনে।
বর্তমান বাস্তবতায়
অনেকেই সৌরবছরের
হিসেবে জাকাত
আদায় করে
থাকেন। সেটা
অনেক ক্ষেত্রে
জানুয়ারি-ডিসেম্বর
এ ১২
মাস সময়কাল
ধরে। আবার
আয়করের হিসাবের
সঙ্গে মিল
রাখতে কেউ
কেউ জুলাই-জুন
সময়কাল অনুসরণ
করেন। তা
যেটাই হোক
না কেন,
এখানে জাকাতের
হার হবে
প্রায় দুই
দশমিক ৬০
শতাংশ। কেননা,
৩৬৫ দিনে
এক সৌরবছর।
সাধারণত প্রতি
রমজান মাসেই
সিংহভাগ মুসলমান
জাকাতের হিসাব-নিকাশ
করে থাকেন।
এটা কোনো
বাধ্যতামূলক বিষয়
নয়। রমজানে
দান করার
সওয়াব অনেক
বেশি, মূলত
এ বিবেচনা
থেকেই এটা
করা হয়।
আর তাই
রমজান মাসের
প্রথম দিন
বা জাকাতদাতার
সুবিধামতো একটি
দিনকে বেছে
নিয়ে ওই
তারিখে জাকাতযোগ্য
সম্পদের বাজারদর
এবং নিজের
দায়-দেনার
স্থিতি হিসাব
করতে হবে।
ওই হিসাবের
ভিত্তিতেই নিসাব
ও জাকাত
নির্ণয় করতে
হবে। তারপর
জাকাত দিতে
হবে। এগুলো
হিসাব করা
খুব কঠিন
নয়। ব্যক্তির
নিজস্ব আয়ের
এক বা
একাধিক উৎস
থাকতে পারে।
ব্যাংক, বীমা
ও বিনিয়োগের
বিবৃতিপত্র থেকে
অনায়াসেই প্রতি
মাসের স্থিতি
জানা যায়।
নিজের কাছে
রক্ষিত নগদ
টাকার হিসাব
করাও সহজ। (চলবে)
তানিম আসজাদ:
লেখক
ও সাংবাদিক