কার্বন নিঃসরণ কমাতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে অবিলম্বে এক উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত জলবায়ুবিষয়ক দুই দিনব্যাপী লিডারস সামিটের উদ্বোধনী সেশনে ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

জলবায়ু ইস্যুগুলো সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী আমাদের শিখিয়ে গেল যে শুধু শক্তিশালী সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ভালনারেবল টোয়েন্টির (ভি২০) সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।

তিনি বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসইভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি প্রচার করছে। আর ব্যাপারে সিওপির দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র সিভিএফের চেয়ার হিসেবে আরো কিছু পরামর্শ দিতে চাই।

দ্বিতীয় পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন প্রশমনের মধ্যে ৫০ঃ৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে। তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে।

তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে।

তিনি সর্বশেষ পরামর্শে বলেন, সবুজ অর্থনীতি কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময় করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক প্রশংসা করছে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ সীমিত সম্পদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজন প্রশমনের ক্ষেত্রে বিশ্বনেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর আমরা আমাদের জিডিপির প্রায় দশমিক শতাংশ বা প্রায় বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি। আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। এটা আমাদের পরিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বিদ্যমান জ্বালানি, শিল্প পরিবহন খাতের পাশাপাশি নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করেছি। এভাবে আমরা কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়া ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চাভিলাষী এনডিসি পেশের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষ উদযাপন করছে। উপলক্ষে আমরা দেশব্যাপী ৩০ মিলিয়ন চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছি এবং কম কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন