খাবার কিনতে ঋণগ্রস্ত হচ্ছে ৩৭% স্বল্প আয়ের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার ঘোষিত প্রথম লকডাউনে স্বল্প আয়ের মানুষরা তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাদ্যসামগ্রী দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় লকডাউনে স্বল্প আয়ের দরিদ্র মানুষের আয়ের উৎস আরো সংকুচিত হয়েছে। প্রায় ৬৫ দশমিক ৭১ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তিনবেলা খাবার জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিধায় ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ পরিবারকে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। হ্রাস পেয়েছে প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের মাত্রা।

গতকাল খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি খাদ্যগ্রহণে প্রভাব শীর্ষক জরিপের ফলাফল নিয়ে ওয়েবিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি। সম্মানীয় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক . সায়মা হক বিদিশা, ইকো কো-অপারেশন দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসূচি পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী। জরিপের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো . নাজনীন আহমেদ।

. নাজনীন আহমেদ বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেয়া লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষত দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, রাস্তার ধারের হকাররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যা দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি অসহনীয় চাপ তৈরি করেছে। স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। ধান-চাল, আটা, তেল, শাকসবজিএগুলোর মূল্যস্ফীতি জানুয়ারি ২১ থেকে আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বক্তারা বলেন, স্বল্প আয়ের এসব মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা দরকার। কৃষক যেন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে। সরকারি সহায়তা যেন প্রকৃত দরিদ্র মানুষ পায়, সেক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকার অনুমোদিত বৃহৎ রাইস মিলাররা যে পরিমাণ চাল মজুদ করার এখতিয়ার রাখে, তা চালের বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। বাজারে হয়তোবা সিন্ডিকেটের প্রভাব খুব কম, কিন্তু মিলারদের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেটিতে মনোপলি পরিস্থিতি বা বাজার অস্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখতে পারে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগও ম্লান হয়ে যায়। খোলাবাজারে বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি দরিদ্র মানুষ যেন তাদের হাতের কাছে খাদ্যসামগ্রী পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান মহসিন আলী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন একটি অস্বাভাবিক সময় আমরা অতিক্রম করছি। মানুষের আয় কমে গেছে, পাশাপাশি খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্যসামগ্রী বিক্রির একটি উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল, চিনি, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে, তার একটা প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। আমরা মনিটরিং করছি, কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই। মাত্র ২৮টি টিম কাজ করছে। রমজান মাসে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির জন্য ৩৫ হাজার টন সয়াবিন তেল বরাদ্দ করা হয়েছিল।

. সায়মা হক বিদিশা বলেন, যেসব মানুষ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে রয়েছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাও খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে পতিত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম দেখা যায় না। সেজন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন