নেত্রকোনায় বোরো ধানের ন্যায্য দামে খুশি কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা

নেত্রকোনার তিন উপজেলায় হাওরে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাঠজুড়ে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৮৫/৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে। দুই দফায় হিট শক শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির পরও কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

জেলার মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, হাওরাঞ্চলে কৃষকদের সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। আগাম বন্যা কিংবা শিলাবৃষ্টিতে তাদের কষ্টের ফসলের যেন আর কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য পাকাধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। সর্বত্র ধান কাটা, মাড়াই ধান সেদ্ধ করে তা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কোথাও কৃষি শ্রমিক, কোথাও আবার সরকারের ভর্তুকি দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধান কাটা মাড়াই নিয়ে গোলায় তোলা হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

কয়েক দিন আগে গরম ঝড়ো বাতাস শিলাবৃষ্টিতে হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের আংশিক ক্ষতি হওয়ার পরও বেশির ভাগ হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কৃষকরা মাঠে ধান বিক্রি করছেন প্রতি মন ৮৩০-৮৫০ টাকা, ধান কাটার শুরুতেই ছিল প্রকার ভেদে মন প্রতি ৯২০-৯৫০ টাকা।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী উপজেলায় ২০ হাজার ১০০ হেক্টর, মদন উপজেলায় ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৩ টন।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, জেলার হাওর এলাকায় ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। তাই অতিবৃষ্টি কিংবা আগাম বন্যা শুরু হলেও হাওর এলাকার ফসলের আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়মতো সঠিক পরামর্শ দেয়ায় এবং হিট শক শিলাবৃষ্টির পরও শেষদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাওরাঞ্চলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সম্প্রতি গরম ঝড়ো হাওয়ায় হাওরাঞ্চলে হাজার ৪৪৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আর শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ফলন। তার পরও আশা করছি, বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হবে।

জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান জানান, অতিবৃষ্টি পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে উপজেলা প্রশাসন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফসলি জমিতে শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার কৃষি শ্রমিকদের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ধান কাটা শেষ হচ্ছে। আশা করছি, হাওরাঞ্চলের কৃষকরা নির্বিঘ্নে তাদের পরিশ্রমের ফসল ভালোভাবেই ঘরে তুলতে পারছেন। বর্তমানে হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন