কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পণ্য পরিবহন

কম খরচের পার্সেল ট্রেনে আগ্রহ নেই কৃষক-ব্যবসায়ীদের

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

কভিড-১৯-এর কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী প্রথম ধাপে সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিধিনিষেধ চলাকালীন পরিবহন সহজতর করতে বিশেষ পার্সেল ট্রেন সুবিধা চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কয়েক গুণ কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে এসব পার্সেল ট্রেনে। তা সত্ত্বেও পণ্য পরিবহনে এসব পার্সেল ট্রেন ব্যবহারে কৃষক ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত প্রচার প্রচারণার অভাব সীমিত ট্রেন সার্ভিসের কারণে কৃষক-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না ট্রেন সার্ভিস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্সেল ট্রেনে প্রতি কেজি পণ্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পরিবহনের খরচ মাত্র টাকা ৮১ পয়সা। পণ্যটি যদি কৃষিজাত হয়, তবে এর ওপর আরো ২৫ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছেন সেবাগ্রহীতা। হিসাবে প্রতি পাঁচ টন কৃষিজাত পণ্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পরিবহন করতে খরচ হবে মাত্র হাজার ৭৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পাঁচ টন পণ্য ট্রাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে ১২-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে।

অন্যদিকে নিয়মিত পাঁচ-ছয়টি বগিসংবলিত রেক দিয়ে এসব পার্সেল ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে, যা কোনো কোনো দিন প্রায় খালি অবস্থায় নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। এতে অনেক ট্রেন জ্বালানি খরচের সমপরিমাণও আয় করতে পারছে না।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের তথ্যমতে, সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ী, ঢাকা থেকে সিলেট, পঞ্চগড় থেকে ঢাকা এবং খুলনা থেকে চিলাহাটি রুটে উভয় পথে আটটি পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। ১৪ এপ্রিল চালু হওয়া পার্সেল ট্রেন- -এর মাধ্যমে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করেছেন হাজার ৮৯৬ জন। টনের হিসেবে পণ্য পরিবহন হয়েছে মাত্র ৮০ টনের কিছু বেশি। এছাড়া আয় হয়েছে মাত্র লাখ ৫২ হাজার ৩১০ টাকা। তবে সাড়া না পেলেও পার্সেল- ট্রেন দুটি নিয়মিত ছয় থেকে ১২ রেক অর্থাৎ ছয়টি কোচ নিয়ে পথিমধ্যে বেশ কয়েকটি যাত্রাবিরতি দেয়। যেগুলো চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ীতে কৃষি বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে।

ট্রেনগুলোর মধ্যে ঢাকা-সিলেট রুটের পার্সেল ট্রেনটি ঢাকা থেকে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যাবে। সিলেট পৌঁছবে রাত ২টা ৩০ মিনিটে। এছাড়া সিলেট থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ওই ট্রেন সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-সরিষাবাড়ী রুটে পার্সেল ট্রেনটি বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে ভোর ৪টায় সরিষাবাড়ী পৌঁছবে। ফিরতি পথে ট্রেনটি ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে সরিষাবাড়ী থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছবে। এছাড়া সপ্তাহে শনি, সোম, বুধবার খুলনা-চিলাহাটি রুটের পার্সেল ট্রেনটি খুলনা থেকে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে চিলাহাটি পৌঁছবে। একই রুটে সপ্তাহে তিনদিন রোববার, মঙ্গলবার বৃহস্পতিবার চিলাহাটি থেকে পার্সেল ট্রেনটি বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যাবে। খুলনা পৌঁছবে দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে। অন্যদিকে সপ্তাহে তিনদিন শনিবার, সোমবার বুধবার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন-ঢাকা রুটে একটি পার্সেল ট্রেন চলবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে ট্রেনটি নির্ধারিত দিনে বেলা ১টায় ছেড়ে দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকায় পৌঁছবে। একই রুটে সপ্তাহে তিনদিন রোববার, মঙ্গলবার বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে পৌঁছবে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সরিষাবাড়ী চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে পরিবাহিত পার্সেল পণ্য ভৈরববাজার আখাউড়া স্টেশনে ল্যাগেজ ভ্যান সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে দেশের যেকোনো গন্তব্যে পাঠানো হবে। খুলনা-ঢাকা রুটের পণ্য পরিবাহিত লাগেজ ভ্যান ঈশ্বরদী স্টেশনে বিয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ট্রেনে সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। অর্থাৎ নির্ধারিত রুট ছাড়াও দেশের অন্যান্য যেকোনো গন্তব্যে পণ্য পাঠানোর জন্য রেলওয়ে সার্বিক সেবা প্রদান করছে।

বিশেষ পার্সেল ট্রেনে কৃষিজাত পণ্য, যেমন শাকসবজি, দেশীয় ফলমূলসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে মূল ভাড়ার ওপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য সব ধরনের চার্জ করোনাকালীন সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য মওকুফ করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনের স্বার্থে যেকোনো প্রয়োজনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম খানকে ফোকাল পারসন নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ০১৭১১-৬৯১১৯০ নম্বরে ফোন দিয়ে পণ্য পরিবহনের বুকিং দিতে পারবেন কৃষক বা ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করে রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালীন বিধিনিষেধের মধ্যে জীবন জীবিকা চালু রাখতে হবে। এজন্য কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহন করতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ পার্সেল ট্রেন চালু করেছে। রেলওয়ে অতীতে বিভিন্ন দুর্যোগকালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, ক্যাটল ট্রেনসহ পার্সেল ট্রেন পরিচালনা করেছে। স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রতিদিন ছয়-সাতটি জ্বালানি, সার, খাদ্যশস্য আমদানি-রফতানিবাহী কনটেইনার ট্রেন পরিচালনা করছে। কিন্তু দেশের দুযোগপূর্ণ সময়ে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি এবং ভোক্তাদের চাহিদার সংকট মেটাতেই পার্সেল স্পেশাল চালু করা হয়েছে। তবে সার্ভিসগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এজন্য রেলওয়ে প্রচার-প্রচারণার অভাবকে দায়ী করেন তারা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিধিনিষেধের মধ্যে কৃষক সাধারণ ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনের স্বার্থে খুব কম খরচে রেলওয়ে পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় রেলপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ কম। তার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবাগ্রহীতা পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরও আমরা কৃষক কৃষির স্বার্থে পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু রেখেছি। আশা করছি. আগামীতে পার্সেল ট্রেনে সাধারণ মানুষের উৎপাদিত পণ্য কম খরচে সহজে পরিবহন করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন