প্রথম প্রান্তিক

লাফার্জহোলসিমের বিক্রি বেড়েছে ২৩%

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড চলতি ২০২১ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভালো ব্যবসা করেছে। মূলত বাজারে নতুন সিমেন্ট আনার পাশাপাশি চুনাপাথর চিপের ব্যবসা থেকে আয় যোগ হওয়ার কারণে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া প্রচলিত সিমেন্টের ব্যবসায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানিটির। সব মিলিয়ে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির  বিক্রি ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল বিকালে অনুষ্ঠিত সভায় চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের পর্ষদ। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৬৩১ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৫১২ কোটি টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৫২ কোটি টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৯৮ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮৯ পয়সা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪৫ পয়সা।

প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজেশ সুরানা বলেন, উদ্ভাবন টেকসই ব্যবসায় সুনির্দিষ্ট আলোকপাতের মাধ্যমে আমরা ধারাবাহিকভাবে দারুণ ফলাফল অর্জন করতে  পেরেছি। আমাদের নতুন পানিরোধী সিমেন্ট নতুন বিপণন চ্যানেল ডিরেক্ট টু রিটেইল ভালো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। নতুন নতুন নির্মাণ পণ্য উদ্ভাবনে আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ সেবা প্রদান করার যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। প্রান্তিকে আমরা ক্লিয়ার সাইজ অ্যাগ্রিগেটস ব্যবসা শুরু করেছি, যার পুরোটাই আগে আমদানি করতে হতো। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যের বিষয়ে ইতিবাচক চাহিদা পাচ্ছি। 

সম্প্রতি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ হোলসিম ওয়াটার প্রটেক্ট নামে বিশেষ ধরনের পানিরোধী সিমেন্ট বাজারে এনেছে। আর বছরের শুরুতে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের চুনাপাথর চিপের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এসব চুনাপাথর চিপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এগুলো ক্লিয়ার সাইজের গ্রেডেড চিপ। অর্থাৎ এসব চিপের সবগুলোর আকার আকৃতি একই, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনের অন্যতম শর্ত। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত তাদের ক্লিংকার সিমেন্ট উৎপাদন কারখানা প্রাঙ্গণেই চুনাপাথর চিপ ক্রাশিং ইউনিটটি স্থাপন করেছে। ইউনিটটি বছরে ১২ লাখ টন কোণ আকৃতির চুনাপাথর চিপ উৎপাদন করতে সক্ষম। ইউনিট স্থাপনে কোম্পানিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত হিসাব বছরের সম্মিলিত হিসাব অনুযায়ী, লাফার্জহোলসিমের বিক্রি হয়েছে হাজার ৬২২ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে তা ছিল হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। গেল হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে টাকা পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল টাকা ৫০ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৮৯ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১৩ টাকা ৯৫ পয়সা।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল লাফার্জহোলসিম। তার আগের চার হিসাব বছরেও একই হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৫৭ টাকা ৭০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে।

২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪৫৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১৬ দশমিক শূন্য শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৮১ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী বাকি ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ৩৪ দশমিক ৪৭, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ৩৩ দশমিক ৫৬।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন