মিস আয়ারল্যান্ড খ্যাত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তী অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন আয়ারল্যান্ডে। মাঝে মাঝে দেশে ফিরলেও নানা কাজেই ব্যস্ত থাকেন। কখনো সামাজিক কাজে, কখনো ফটোশুটে আবার কখনো অভিনয়ে। লেখালেখিও করছেন। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে পরিকল্পনা থাকলেও দেশে আসা হয়নি। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ড থেকে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন কুদরত উল্লাহ
অনেক বছর ধরেই আয়ারল্যান্ডে বসবাস করেছেন। এখন কেমন আছেন?
খুব ভালো আছি, আমি সবসময় দারুণ থাকি। অনেক বছর বলতে কিছু নেই। আমি এই বিশ্বের মুক্ত স্বাধীন নাগরিক। যখন জীবন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই তো থাকব। এটাই তো নিয়ম তাই না?
তা ঠিক। কিন্তু কভিডের মহামারীর এ সময়টা কীভাবে কাটাচ্ছেন?
কভিডে পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও যারা শিল্পী, যারা ক্রিয়েটিভ তারা কিন্তু থেমে নেই, খোঁজ নিয়ে দেখেন তারা বরং ঘরবন্দি অবস্থায় আরো বেশি কাজ করেছেন। কাজের ধরন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। নতুন নতুন অনেক কিছু সৃষ্টি করে ফেলেছেন। আমিও আমার লেখালেখি, আর্ট কালচার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছি, এখনো করছি।
অভিনয় নিয়ে এখন ব্যস্ততা কেমন?
অভিনয় তো করেই যাচ্ছি। পর্দায় নিয়মিত দেখতে না পাওয়া মানে এই নয় যে অভিনয় করছি না। অভিনয় করার অনেক মাধ্যম আছে। অভিনয়ে আমি নিয়মিত আছি (স্থানীয় অভিনয়ের প্লাটফর্মে)। অভিনয়, মডেলিং আমার প্যাশন। আমার জন্য এটা জরুরি নয় যে কাজটা কতখানি পাবলিসিটি পেল, কতটা জনপ্রিয় হলো, কত মানুষ জানল, কিংবা কয়টা স্ক্রিন প্লাটফর্মে দেখা গেল। ‘পটেনশিয়াল এক্সপ্রেস’
করার জায়গা থাকা জরুরি। আমি ব্যাপারটা এভাবেই দেখি ।
আপনার তো ‘মাসুদ রানা’
ছবিতে রূপা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। কতদূর এগোল বিষয়টা?
গত বছর প্রথম দিকে খানিকটা রহস্য রেখেছিলাম। কারণ আমার সঙ্গে মৌখিক আলোচনা হয়েছিল পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে। কিন্তু লিখিত কোনো চুক্তি করেননি তারা। তাই আমি শিওর না হয়ে জানাতে চাচ্ছিলাম না কাউকে। কিন্তু এখন আমি শিওর। তাই আপনাকে নিশ্চিত করে জানিয়ে দিচ্ছি। কিছুদিন আগে ‘মাসুদ রানা’ ছবির রূপা চরিত্রে অভিনয় করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়ে গেছে। এখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের সময় অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা দেবে।
আপনি তো লেখালেখির সঙ্গেও জড়িত। আপনার প্রকাশিত উপন্যাস এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখি প্রসঙ্গে শুনতে চাই।
মহামারীর কারণে এবার বই প্রকাশের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারিনি। তবে এ ক্ষুদ্র লেখিকার বই মানুষ পড়ছেন তা জেনে মন ভরে আছে আনন্দে। ধন্যবাদ সব পাঠককে যারা লেখকদের অনুপ্রাণিত করেন, আমরা কৃতজ্ঞ। আমার লেখা ‘কণ্টক শয্যা’
বইটি কেন পড়বেন? এটা জানতে হলে আপনাকে বইটি পড়তে হবে। তবে ঠকবেন না এতটুকু জানি।
এত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে সময় দিতে পারেন?
দিনের শুরু থেকে শেষ পুরো দিনটিই তো নিজেকে সময় দিচ্ছি। যে কাজকে ভালোবাসি সেই কাজটিই তো করছি। স্বাধীনভাবে করছি, নিজের ওপরই পুরো সময়টা ইনভেস্ট করছি। সুস্থ থাকা, ব্যায়াম করা, ঘরের অন্যান্য কাজকর্ম, পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখা, এমনকি পরিবারে সুখ-আনন্দ নিয়ে আসাও তো আমার আনন্দ। এ সবকিছুই তো আমার জন্য। সুতরাং পুরোটাই আসলে নিজের জন্যই সময়।
ঈদের দিনটা কীভাবে কাটান?
যেহেতু আয়ারল্যান্ডে থাকি সুতরাং ঈদের আমেজটা এখানে আলাদা করে নেই। নিজেরা ঘরোয়াভাবে কিছু আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই পরিচিতজনদের সঙ্গে। এখানে বড়দিনের সময় কয়েক মাসব্যাপী আয়োজন থাকে।
আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। আপনার মুখ থেকেই জানতে চাই প্রিয়তী আসলে কেমন?
(হাসি) ভালো প্রশ্ন করেছেন। যে যা বলে বলুক না! তাতে আমার কী আসে যায়! তবে আপনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন তাই বলছি—হিংসা নামক শব্দটি আমার অভিধানে নেই, আমি সবসময় আমার সঙ্গে থাকা কিংবা দূরে থাকা মানুষ, হোক পরিচিত কিংবা অপরিচিত—সব মানুষের সুস্থ ও ভালো জীবন প্রার্থনা করি। আমি দুর্দমনীয়। ‘সত্য’
হলো আমার শক্তি।
সামনে দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে?
যেকোনো সময় ফিরতে চাই। দেশে অনেক কাজ করার কথা চলছে। অনেকেই কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমার বিষয়টি দারুণ লাগছে যে দেশের মানুষের কাজ করার আচরণ-ভঙ্গিমা পাল্টাচ্ছে, কাজ করার পরিকল্পনা বিস্তরভাবে প্রসারিত হচ্ছে। দেশ থেকে আমি এত দূরে থাকা সত্ত্বেও যে মানুষ আমাকে মনে রাখে, একসঙ্গে কাজ করতে চান, এটাই তো আমার জন্য বিশাল ব্যাপার। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনার সময় কাটে কীভাবে?
দেশের নাটকের মাধ্যমেই আমি আমার শিকড়কে অনুভব করি। তাই নাটক দেখা হয় প্রায়ই। জীবনের প্রতিটা সেকেন্ড যেন প্রডাক্টিভ হয় আমি তা নিশ্চিত করি, এ নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। সময় নষ্ট করে আফসোস করতে আমি মোটেও রাজি নই। আমার সময় বরং দৌড়ায়, আমার কাছে মনে হয়, ২৪ ঘণ্টার দিন না হয়ে ৩০ ঘণ্টার দিন হলে ভালো হতো।
দেশের কোন জিনিসটা বেশি মনে পড়ে?
বর্ষাকাল। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ। আম-লিচুর মৌসুম। আরো আছে, সব একসঙ্গে আজ না বলি, দেখা হলে বলব একদিন। হা-হা-হা...!