ব্লাস্ট ও লিফ ব্লাইটের প্রাদুর্ভাব

মেহেরপুরে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

মাহাবুব আলম, মেহেরপুর

মেহেরপুরে বোরো ধানে ব্লাস্ট ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে সাম্প্রতিক হিট শকের প্রভাবও। এতে জেলার বেশির ভাগ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধানের শিষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। জমিতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ছিটিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষক। এতে জেলায় বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ধানের ফলন ঠিক রাখতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। হঠাৎ ব্লাস্ট ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় আগামী মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানের আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার তিন উপজেলায় ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সারা বছর পরিবারের চালের চাহিদা মেটাতে বিক্রির উদ্দেশে বোরো ধান আবাদ করেন কৃষকরা। কিন্তু এবার ব্লাস্টের আক্রমণে জমির ধানের শিষ চিটায় পরিণত হচ্ছে। গাছ ভালো থাকলেও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানের শিষ। অন্যদিকে উঁচু এলাকার জমিতে দেখা দিয়েছে ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট বা পাতা পোড়া রোগ। এছাড়া হিট শকের কারণে অনেক জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে জেলাজুড়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব রোগ সম্পর্কে ধারণা ছিল না স্থানীয় কৃষকদের। তাদের ধান এর আগে এসব রোগে আক্রান্তও হয়নি। সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েও উপকার পাচ্ছেন না তারা। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ধানে ওষুধ ছিটাচ্ছেন, তাতেও কাজ হচ্ছে না। ফলে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। জমি থেকে ন্যূনতম ফসলও তুলতে পারবেন কিনা সে দুশ্চিন্তা করছেন কৃষক। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর কোনো সমাধান দিতে পারছে না।

গাংনী উপজেলা হিজলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, চলতি মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতেহ ২৮ জাতের ধানের আবাদ করছেন তিনি। ধান পরিচর্যার শেষ পর্যায়ে এসে শিষে চিটা দেখা দিয়েছে। ওষুধ ছিটিয়েও উপকার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধান এখন গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

একই এলাকার মিন্টুও বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। ইচ্ছে ছিল পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অল্প কিছু ধান বিক্রয় করা হবে। কিন্তু নতুন রোগের কারণে এখন নিজের খাদ্যও হবে না। ফলে নিজের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হবে আমার পরিবারকে।

গাংনী পৌর এলাকার জমির উদ্দীন জানান, ব্লাস্টের কারণে ধানের শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তা ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ব্লাস্ট রোগে দুই বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় আছি।

মেহেরপুরের শহিদুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। পাঁচ বিঘা জমিতেই দেখা দিয়েছে নানা রোগ।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম সাহাব উদ্দীন বলেন, নতুন করে এলাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এজন্য আমরা আগামী বছরে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদে কৃষকদের নিরুসাহিত করব। পাশাপাশি হিট শকের কারণেও কিছু জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া কিছু জমিতে ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটের কারণে ধানের পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কীটনাশন স্প্রে বেশি করে পানি দিলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

তবে তিনি বলছেন, চলতি মৌসুমে কিছুটা ফলন বিপর্যয় হলেও এটির মাত্রা খুব বেশি হবে না। কারণ রোগব্যাধি সাধারণত ব্রি-২৮ জাতের ধানে দেখা দিয়েছে। অন্যান্য জাতের ধানে হিট শক ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যেসব জমিতে এখনো শিষ আসেনি, সেসব জমিতে সেচের পাশাপাশি প্রতি বিঘায় পাঁচ কেজি পটাশ সার ছিটানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন