নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

লালমনিরহাটে ঝড়ে ভেঙে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে কালবৈশাখীতে ভেঙে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। এসব ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ নিম্নমানের কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি করার কারণে সামান্য ঝড়েই ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এসব ঘর নির্মাণের পর বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ চলাচলের জন্য কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঘরে বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত আধা পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে এবং টিনের চাল উড়ে গেছে।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমিহীনদের আধা পাকা ঘর উপহার দিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প- গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য শতাংশ জমি ওপর দুই কক্ষের একটি আধা পাকা ঘর, রান্নাঘর টয়লেট নির্মাণ করে দেয়া হয়। সদর উপজেলার ১৫০টি পরিবারের আবাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সরকারি খাস জমিতে আধা পাকা ঘর তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায়। কোদালখাতা এলাকায় ১০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১০টি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়।

দুই মাস আগে এসব ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হলে সুফলভোগীদের হাতে জমির দলিল ঘরের চাবি হস্তান্তর করে সদর উপজেলা প্রশাসন। চাবি হস্তান্তরের দুই মাস পার হলেও যোগাযোগের রাস্তা, পানি বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সুফলভোগীরা ঘরে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের বারান্দার পিলার ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে। উড়ে গেছে বারান্দাসহ ঘরের ছাউনির টিন। সুফলভোগী স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে।

টয়লেটে সিরামিকের প্যান বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের প্যান। ব্যবহারের আগেই ফেঁটে গেছে এসব প্যান। নেই পানি বিদ্যুতের ব্যবস্থা। চলাচলের মতো রাস্তাও নেই। শুরু থেকে ভালোমানের কাজের দাবি করে এলেও সুফলভোগীদের সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।

হালিমা নামে একজন জানান, ১০ বছর আগে স্বামী তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। সেই থেকে বাবার বাড়িতে ঝুপড়ি ঘরে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভূমিহীন হওয়ায় জমিসহ পাকা ঘর উপহার পাওয়ার খবরে বেশ আনন্দই পান তিনি। জমির দলিল ঘরের চাবি পেলেও থাকার পরিবেশ নেই নবনির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। তাই বসবাস শুরু করেননি কেউ। এরই মধ্যে সামান্য ঝড়ে ভেঙে গেছে তার উপহারের ঘর। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ভেঙে যাওয়া ইট টিনগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ করা হয়েছে। যা বরাদ্দ তাই ব্যয় করা হয়েছে। ঝড় হলে তো ঘরে ভেঙে যেতেই পারে। তবে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ চলাচলের রাস্তা শিগগিরই করে দেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন