তৈরি পোশাক রফতানি

করোনাকালের ক্রয়াদেশে বঞ্চিত বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারীর সময়ে (জানুয়ারি-জুন, ২০২০) ক্রেতারা রফতানি আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রীলংকাসহ বেশ কয়েকটি বড় সরবরাহকারী দেশকে বঞ্চিত করেছে। গবেষণার বরাত দিয়ে ২০ এপ্রিল আয়োজিত এক সংলাপে এমন পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শ্রীলংকার পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার: ভ্যালু-চেইনভিত্তিক সমাধান কি সম্ভব? শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপটি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলংকা (আইপিএস), কলম্বো এবং ৫২টি চিন্তক প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সাউদার্ন ভয়েসের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।

সংলাপের স্বাগত বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন বলেন, সিপিডি এবং আইপিএস সম্প্রতি স্থানীয় পোশাকের পুনরুদ্ধার বিষয়ে একটি ভ্যালু-চেইনভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করার জন্য যৌথভাবে সাউদার্ন ভয়েজের সহযোগিতায় একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতে ভ্যালু-চেইনের যে ক্ষতি হয়েছে, তার উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গবেষণা সরবরাহকারী দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকায় যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে, তা মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

সংলাপে বলা হয়, পোশাক খাতের ভ্যালু চেইনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছিল, তা দীর্ঘমেয়াদে চলা কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চাহিদা মন্দার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়কালে বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে। শুধু জাতীয় স্তরের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ শ্রীলংকাসহ অনেক সরবরাহকারী দেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলেছে। পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যালু চেইনভিত্তিক সমাধান-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, পোশাক খাতের ভ্যালু চেইনের সব অংশীজন অতিমারীতে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই গবেষণার ফলাফলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। খাতকে টেকসই করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে সব অংশীজনকে কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।

এছাড়া সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আইএলও সরবরাহকারী দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রয়কারী দেশগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে একটি উদ্যোক্তা ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সরকার, নিয়োগকারী শ্রমিকদেরসহ ত্রিপক্ষীয় সংলাপ করা উচিত। যাতে কেবল কভিড সংকটের তাত্ক্ষণিক প্রভাব নয়, দীর্ঘমেয়াদি সংকট সমাধানের জন্য বেকার বীমা ব্যবস্থার পারস্পরিক সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক . খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং আইপিএসের অর্থনীতিবিদ কিথমিনা হিউজ জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে, বড় দেশগুলো মহামারীর সময় সীমাবদ্ধ সংখ্যক সোর্সিং দেশগুলোতে বেশি গিয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। মহামারীর সময়কালে ক্রেতারা রফতানি আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রীলংকাসহ বেশ কয়েকটি বড় সরবরাহকারী দেশকে বঞ্চিত করেছে।

মূল বক্তব্যে আরো বলা হয়, কভিড-পূর্ব সময়ের রফতানির আদেশের অংশ বজায় রাখতে হলে সরবরাহকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্ডার পুনরায় বিতরণ করা যেতে পারে। সমীক্ষায় প্রস্তাব করা হয়েছে যেকোনো বড় বৈশ্বিক সংকটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে সংকট-পূর্ব পর্যায়ের রফতানি আদেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি পুনর্বিতরণ পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষত যেসব দেশ আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

এমএএস হোল্ডিংস স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সফরমেশন পরিচালক হুসনি সালিহ জানান, যদি সব অংশীজন একসঙ্গে কাজ করেন, বিশেষ করে রকম সংকট পরিস্থিতিতে। তাহলে ভ্যালু চেইনের মান বেড়ে যায়। তুলনামূলকভাবে বৈচিত্র্যময় তবে বিদ্যমান ভ্যালু চেইনের মধ্যে সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সংকট সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

সংলাপের আরেক বিশেষ বক্তা বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠাতা সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, চলমান সংকট চলাকালীন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে দায়বদ্ধ ব্যবসায়িক আচরণের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ব্র্যান্ডগুলোর তাদের সরবরাহকারীদেরকে ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করা উচিত।

ডিজাইন কালেক্টিভ স্টোর শ্রীলংকার সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনু বিক্রমাসিংহের মতে, তার মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অতিমারীর জন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ করে ঋণ পাওয়া নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। অনলাইন বাণিজ্য অতিমারীতে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও তিনি মনে করেন।

এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের হেড অব সাসটেইনেবিলিটি গ্লোবাল প্রডাকশন পিয়েরে জানান, অতিমারীর কারণে ব্যবসা সহজতর করায় আধুনিকায়নের তাত্পর্য উঠে এসেছে। তিনি আরো যোগ করেন, বাংলাদেশ শ্রীলংকার বিবেচনা করা উচিত যে, কীভাবে বাজারকে পণ্য বৈচিত্র্যের সঙ্গে সংযুক্ত পরিষেবাদি এবং অতীতের তুলনায় উচ্চতর ব্যবসায়ের সম্ভাবনা অর্জনের টেকসইতা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাজারকে আরো প্রস্তুত করা যায়।

সংলাপের সর্বশেষ বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বেটার ওয়ার্কের ড্যান রিস। তিনি বলেন, শুধু খাতভিত্তিক পরিমাপ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে পারবে না। সহনশীলতা তৈরি করতে এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে অংশীজনদের মধ্যে আস্থা সহযোগিতা এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

সিপিডির বোর্ড অব স্ট্রাস্টিজ সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামানসহ অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাংবাদিকরা সংলাপে যোগ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন