বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় সূচকে সামান্য উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে লাগাম টানতে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধের মধ্যেই টানা সাত কার্যদিবস ধরে ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। গত মঙ্গলবারও সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি প্রায় হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। টানা উত্থানের কারণে গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দিনশেষে সূচকের সামান্য উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় গতকাল লেনদেনের শুরুতে যে ক্রয়চাপ দেখা গেছে, তা পরে আর ধরে রাখা যায়নি। তবে গতকালও বাজারে বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায় বিলম্বিত করার কারণে বিনিয়োগকারীরা মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে এতে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণে গতকাল এই দুই খাতের শেয়ারে বিক্রির চাপ লক্ষ করা গেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর কিছু সময় পর পতন হয় সূচকের। এরপর আবার উত্থান পতনের মাধ্যমে মিশ্র অবস্থায় লেনদেন শেষ হয়। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের দিন ছিল হাজার ৪২১ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থান ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, বেক্সিমকো, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স আরএকে সিরামিকের।

এদিকে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল সামান্য কমে দিন শেষে হাজার ২৩৩ পয়েন্টেই অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল হাজার ৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৮২ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৭৬ কোটি ৬৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এর আগের দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১৫৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৭টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত। দশমিক ৭৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আর্থিক খাত। দশমিক ৭৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের। আর দশমিক ৬১ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিডি ফাইন্যান্স, রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, সামিট পাওয়ার অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।

গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, বিডি থাই, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, জিকিউ বলপেন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স।

অন্যদিকে ডিএসইতে গতকাল দরপতনের শীর্ষে ছিল যমুনা ব্যাংক, জুট স্পিনার্স, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলস লিমিটেড।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১৪ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৪২টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ৯৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৩৩ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৭১ কোটি ৪৯ লাখ হাজার টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন