জ্বালানি রূপান্তরে বিশ্বজুড়ে ব্যয় সর্বকালের সর্বোচ্চে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নির্গমন বন্ধে একের পর এক উন্নত দেশ সময়সীমা ঘোষণা করছে। বসে নেই বৈশ্বিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও। বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবহূত জ্বালানি পরিবর্তন করছে। এক্ষেত্রে কয়লা, তেল গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। আর জ্বালানি রূপান্তরে গত বছর বিশ্বজুড়ে ব্যয়ের রেকর্ড হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।

বিভিন্ন দেশের কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বন্ধের উদ্যোগ এবং কভিড-১৯ মহামারী থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দেয়ার বিষয়গুলো ব্যয়কে ত্বরান্বিত করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে জ্বালানি রূপান্তরের ব্যয় বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ডব্লিউইএফের এনার্জি ট্রানজিশন ইনডেক্স ২০২১ অনুসারে, গত বছর জ্বালানি রূপান্তরে অর্থপ্রবাহ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ব্যয় ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছিল।

১১৪টি দেশের ওপর জরিপ করে ১২টি সূচকের ভিত্তিতে র‍্যাংকিং করেছে ডব্লিউইএফ। দেশগুলোর জ্বালানি সিস্টেমের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের বিষয়গুলো  র‍্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। র‍্যাংকিংয়ে টানা চতুর্থ বছরের জন্য শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইডেন। এর পরের অবস্থানে আছে নরওয়ে ডেনমার্ক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থান অবনতি হয়েছে। তবে সামগ্রিক কার্যক্রম এখনো ইতিবাচক রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি অর্থনীতির মধ্যে আটটি এখন পর্যন্ত ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূচকে ১১৫টি দেশের মধ্যে প্রায় ৯২টি বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরে সামগ্রিক স্কোর ইতিবাচক স্থির গতির দিকে ইঙ্গিত করেছে।

এদিকে চলতি বছর কার্বন নির্গমন বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) যদিও গত বছর নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে কার্বন নিঃসরণ কমে গিয়েছিল। মহামারীজনিত অচলাবস্থা কাটিয়ে এখন আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে অর্থনীতি। পুনরুদ্ধারে কয়লার ওপর অনেক বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। আর কারণে চলতি বছর ১৫০ কোটি টন কার্বন নির্গমনের পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গত বছর নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তিগুলো সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছিল। যেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মোবিলিটি, বিদ্যুতায়িত তাপ এবং কার্বন ক্যাপচার স্টোরেজের মতো অন্য খাতগুলো একটি ছোট অংশ ছিল।

ডব্লিউইএফের জ্বালানি উপকরণ বিভাগের প্রধান রবার্তো বোকা বলেন, মাত্র চারটি দেশ নির্গমন হ্রাস খাতে পুনরুদ্ধার তহবিলের বড় একটি অংশ ব্যয় করেছে। সুতরাং আপনি যদি বর্তমান তথ্যের দিকে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন জ্বালানি রূপান্তর সম্পর্কিত খাতের বরাদ্দগুলোর ৬০ শতাংশই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জীবাশ্ম জ্বালানিকে সমর্থন দিচ্ছে।

মাসের শুরুতে মার্কিন জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর প্রতি কয়লার মতো দূষণকারী খাতে অর্থায়ন বন্ধের আহ্বান জানান। কেরি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য পূরণে দেশগুলোর প্রচেষ্টাকে জোরদার করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

ডব্লিউইএফ বলেছে, যেখানে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, সেখানে বিদ্যুত্হীন মানুষের সংখ্যা এক দশক আগে ১২০ কোটি থেকে নেমে বর্তমানে ৮০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি বিশেষত জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলোকে পরিবেশগতভাবে টেকসই জ্বালানি সুরক্ষায় উন্নতি করতে সহায়তা করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন