গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক ভূরাজনীতি এগিয়েছে নয়া মেরুকরণের দিকে। এ মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় কাছাকাছি চলে এসেছে ভারত ও জাপান। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় একযোগে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে চলেছে দেশ দুটি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কৌশলগত মিত্রতার ক্ষেত্রে অনেকটা বাছবিচারমূলক নীতি অনুসরণ করে জাপান। দক্ষিণ এশিয়ায় এ মুহূর্তে ভারতকেই সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে দেখছে দেশটি। গত কয়েক বছরে দুই দেশের অংশীদারিত্ব ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। বিশেষ করে চীনকে মোকাবেলা করতে গিয়ে দুই দেশ অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে জাপানের দৃষ্টিভঙ্গিকে আখ্যা দেয়া হচ্ছে ‘ইন্ডিয়া প্লাস’ হিসেবে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ (নেইবারহুড ফার্স্ট) নীতির সঙ্গে সমন্বয় করছে জাপান। তবে এক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
জাপানের কূটনৈতিক দলিলগুলোয়ও এর সমর্থন মেলে। দেশটির ‘ডিপ্লোম্যাটিক ব্লু বুক ২০১৭’-এর ভাষ্যমতে, ভূরাজনৈতিকভাবে ভারতের গুরুত্ব অনেক বেশি। এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী দেশটি বেশ কয়েকটি সমুদ্রপথের মাঝামাঝি অবস্থিত। উপরন্তু ভারত এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার দিক থেকেও দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। জাপান ও ভারত এশিয়ার দুই বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মতো বিষয় নিয়ে দুই দেশের মূল্যবোধও অনেকটা এক। একই সঙ্গে মিল রয়েছে কৌশলগত স্বার্থেও।
অন্যদিকে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, টোকিওর বাংলাদেশ-সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও ভারতের বড় ভূমিকা রয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ফোকাল পয়েন্ট এখন প্রধানত দুটি—ভারত ও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)। এ দুইয়ের সংযোগস্থলে উপস্থিতির কারণে জাপানের কাছে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক বেশি। অন্যদিকে মিয়ানমার-শ্রীলংকার মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থানও বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্ববহ। এসব দেশে জাপান অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির বিষয়টিও অনেকটা ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জাপান-ভারতের এ ঘনিষ্ঠতাকে আরো বাড়িয়েছে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। দুই দেশ এরই মধ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা জোট কোয়াড্রিলেটারাল ইনিশিয়েটিভে (কোয়াড) সক্রিয়তা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে চীনকে অর্থনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগও বাড়াচ্ছে। দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও এমনটাই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় জাপান ও ভারতের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো চীনকে অর্থনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা।
সংস্থাটির ভাষ্যমতে, কোয়াডের সদস্যদেশগুলো (জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের অবস্থানকে আরো সংহত করে তোলায় মনোযোগী হয়ে উঠেছে। বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোয় ভারত-জাপানের সহযোগিতামূলক অবস্থানকে কোয়াডের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও ব্যাখ্যা করা যায়। ইন্দো-প্যাসিফিকে এখন অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসছে। এক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে চীন।
ওআরএফ ফাউন্ডেশন বলছে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। একই সঙ্গে তারা চীনকে দেখছে নিয়মতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতি বড় হুমকি হিসেবে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি অনেক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে গত কয়েক বছরে চীনের সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে চীনের মোট প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এখন ভারত ও জাপানের সম্মিলিত এফডিআইয়ের চেয়েও বেশি।
তবে বাংলাদেশ বা মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে জাপান-ভারতের সম্পর্কের মাত্রা নির্ধারণে চীনকেই একমাত্র প্রভাবক বলা যাবে না বলে মনে করছে ওআরএফ ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন বিশ্লেষক সংস্থা। পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, এক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ও জড়িত রয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আসছে বাংলাদেশের কথা। তাদের মতে, জাপান ও ভারত দুই দেশই বাংলাদেশকে দেখছে আসিয়ানের প্রবেশদ্বার হিসেবে। ভারত চাইছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে। এ কানেক্টিভিটিতে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে জাপানও। অনেকটা অভিন্ন এ স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত ও জাপান এখন বাংলাদেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
এছাড়া স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে গভীর মিত্রতায় আবদ্ধ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা ছাড়াও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবসময়ই বেশ ভালো ছিল। অন্যদিকে জাপানও বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর সর্বাগ্রে স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর অন্যতম। চীন প্রভাবশালী হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই গত ৫০ বছরে দেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে জাপান। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সও দুই দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদও মনে করছেন, জাপান-ভারতের বিনিয়োগ বাড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাই মূল ভূমিকা রেখেছে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় রাখতে পারে, তাহলে সবাই আসবে। কারণ ঋণ দেয়া বা বিনিয়োগের সময় প্রধানত অর্থনৈতিক সক্ষমতাকেই বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশও চাইবে যেখান থেকে সবচেয়ে কম সুদে সুবিধা নেয়া যায়, সেখান থেকে নিতে। এছাড়া তারা বিনিয়োগও করছে আমাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যখন যে প্রকল্পে যার কাছ থেকে সুবিধা পাবে, তার কাছ থেকেই সহযোগিতা নেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালেও দেশে ভারত থেকে আসা এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। জাপান থেকে এসেছে ৬ কোটি ১ লাখ ডলার।
ওআরএফ বলছে, দুই দেশই এখন বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এ দুই দেশের সাম্প্রতিক বিনিয়োগগুলোর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চিলাহাটী-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ, ঢাকা-শিলিগুড়ি রেল সংযোগ এবং আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো প্রকল্পগুলোর কথা। ২০০৮ সালে ৪৩ বছর পর ভারতের সঙ্গে পুনরায় চালু হয়েছিল আন্তঃসীমান্ত রেলসংযোগ মৈত্রী এক্সপ্রেস। এরপর দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত রেলসংযোগ প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হলো চিলাহাটী-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ। এখন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশে তিনটি লাইন অব ক্রেডিট সম্প্রসারণ করেছে।
অন্যদিকে গত কয়েক বছরে টোকিওর সঙ্গেও ঢাকার সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। ২০১৬ সালে জাপানের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার দাবিতে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ। পরের বছরগুলোয় জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশ নিশ্চিতে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোরও (এসইজেড) সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে জাপান আড়াইহাজার শিল্প পার্কে ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। ২০২২ সালের মধ্যে এটি সচল হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে গত বছর চীনে পরিচালনাধীন জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রণোদনা দেয়া শুরু করে টোকিও। এক্ষেত্রে বিকল্প যেসব গন্তব্যে উৎসাহ দেয়া হয়, তার অন্যতম ছিল বাংলাদেশ। আগামী বছরেই জাপান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একই বছরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর। এ সময়ের মধ্যে মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে ৪০০ মেগাওয়াটের বিবিয়ানা-৩ গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে ভারতের লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর এবং জাপানের মারুবেনি করপোরেশন। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো তৃতীয় কোনো দেশে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠন করে প্রতিষ্ঠান দুটি। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম গঠনের কাজও পায় জয়েন্ট ভেঞ্চারটি।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও ‘উন্নয়ন অন্বেষণের’ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বণিক বার্তাকে বলেন, পৃথিবীব্যাপী শক্তি ও প্রভাবের একটি পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে হচ্ছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে হচ্ছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হচ্ছে। যেখানে যে মাধ্যম কাজ করছে, সে মাধ্যমই তারা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। কোয়াডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্র ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে যেসব ক্ষেত্র হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেগুলো নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছে।
এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর লাভবান হতে হলে পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি। শর্তগুলো সম্পর্কে ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, প্রথমত, দেখতে হবে এ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট দেশটিকে ঋণী করে রাখবে, নাকি দুই পক্ষই ঝুঁকি ভাগাভাগি করবে। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট দেশকে আমদানিনির্ভর করে তোলে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা দরকার কীভাবে উৎপাদনের নেটওয়ার্ক হবে। সেটা প্রাইমারি প্রডাকশন হোক, ইন্টারমিডিয়ারি প্রডাকশন হোক বা ফিনিশড গুডের প্রডাকশন হোক। মানে বিনিয়োগের ফল হতে হবে আমদানিনির্ভরতা থেকে উৎপাদন নেটওয়ার্কে যাত্রা। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় যেহেতু প্রযুক্তির সক্ষমতা কম এবং যেহেতু এখানকার রফতানি, উৎপাদন বা বাজারের বৈচিত্র্য নেই, সেজন্য দরকার প্রযুক্তিনির্ভর ও সহজে হস্তান্তরযোগ্য বিনিয়োগ। চতুর্থত, প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করবে এবং এর মাধ্যমে সর্বজনকে উপকৃত করবে। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এমনভাবে সম্পদ উত্তোলন ও আহরণ করবে, যাতে সেটা টেকসই হয় এবং সর্বসাধারণের মধ্যে তার ফলাফল পাওয়া যায়। সব শেষে এ কাজগুলো তখনই সার্থক হবে, যখন সাধারণ জনগণের কাছে এ বিনিয়োগের আদর্শিক গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। অন্যথায় তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
প্রতিবেশী মিয়ানমারেও এখন বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে জাপান ও ভারত। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনে জর্জরিত দেশটিতে প্রথম বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল চীন। দেশটি এখন মিয়ানমারের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন একই সঙ্গে মিয়ানমারে এফডিআইয়ের শীর্ষ উৎসও বটে। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মিয়ানমারে আড়াই হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট এফডিআইয়ে চীনের অংশ প্রায় ২৬ শতাংশ। এছাড়া বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচির অধীনে মিয়ানমারে অবকাঠামো নির্মাণেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে চীন। দেশটির বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (ইজেড) এখন মিয়ানমারে চীনের ক্রমবর্ধমান ইকোনমিক ফুটপ্রিন্টেরই অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে ভারত ও জাপানও এখন মিয়ানমারে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইছে। বর্তমানে দেশটিতে ভারতের মোট বিনিয়োগের ৮০ শতাংশই জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে। এছাড়া দেশটির সঙ্গে ভারতের বর্তমানে বেশকিছু আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ প্রকল্পও চালু রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে, কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (কেএমএমটিটিপি), ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর, মান্দালয় বাস সার্ভিস, মেকং-ইন্ডিয়া ইকোনমিক করিডোর ইত্যাদি।
অন্যদিকে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মিয়ানমারে জাপানের বিনিয়োগ ১৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ঋণ চুক্তি রয়েছে, যার মূল্যমান ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি।