টানা ছয় কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী সূচক

১২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ লকডাউন ঘোষণার প্রভাবে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে ধীরে ধীরে সেই আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। লকডাউনের মধ্যেও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসতে শুরু করেছে। এতে গত ছয় কার্যদিবস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে সূচক। আর গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে যে গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। কারণে কভিড-১৯-এর শঙ্কা কাটিয়ে বিনিয়োগকারীরা খাতভিত্তিক যেসব শেয়ারের দর তুলনামূলক কম রয়েছে সেগুলোতে বিনিয়োগ করছেন। শিল্প-কারখানা চালু থাকার কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গতি আসবে বলেও মনে করছেন তারা। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। মাঝে কিছুটা নিম্নমুখিতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত সূচকের উত্থানে শেষ হয়েছে লেনদেন। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের দিন ছিল হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, রবি, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, সামিট পাওয়ার লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে হাজার ২৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ২১৬ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল হাজার ৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৪৬ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে হাজার ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা গত দুই মাস ২৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১৯৩টির, কমেছে ৯৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৩টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩০ দশমিক ৫৭ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ দখলে নিয়েছে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত। ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে টেলিকমিউনিকেশন খাত। ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিবিধ খাতের। আর দশমিক ৯৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আর্থিক খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, রবি, বিডি ফাইন্যান্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, গোল্ডেন সন, শাইনপুকুর সিরামিক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, উত্তরা ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্স, ম্যাকসন্স স্পিনিং আনলিমা ইয়ার্ন।

অন্যদিকে ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১৩০ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৩৭টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৩টির, কমেছে ৭৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৭১ কোটি ৪৯ লাখ হাজার টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন