আবারো বন্ধ জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

২৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্ধ হয়ে গেছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ। জিকের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বারবার সরবরাহ বন্ধের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া তারা বছর বৃষ্টির দুষ্প্রাপ্যতাকেও ঘটনার জন্য দুষছেন।

জিকে পাম্প হাউজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত রোববার ভোরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জিরোতে নেমে আসে দুটি প্রধান পাম্প। গতকাল দুপুর থেকে বন্ধ হয়ে যায় আরো ১২টি বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় সম্পূরক পাম্প।

মিজানুর রহমান জানান, পাম্প হাউজের ইনটেক চ্যানেলে এখন মাত্র চার মিটার আরএল (রিডিউসড লেভেল) পানি পাওয়া যাচ্ছে। সেচের পানি সরবরাহ করতে হলে ইনটেকে পানি থাকতে হবে ১৪ দশমিক মিটার আরএল। পানি সরবরাহ দশমিক মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।

জিকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সেচ প্রকল্পটি পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল। পদ্মায় পানির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে চালু থাকে প্রকল্পটি। সেখানে পানি কম থাকলে জিকের ইনটেকে পানিপ্রবাহ নেমে যাবে এবং তারা পানি সরবরাহ করতে পারবে না।

প্রতি বছর জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় জিকে প্রকল্পে পানি সরবরাহ। বছর ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু করা হয়েছিল। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো হয়। পানিতে দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ মাগুরা জেলার লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলে। চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় সেচ কার্যক্রম পানি সরবরাহ করে।

জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ গত রোববার থেকে কমতে থাকে। গতকাল দুপুরে একেবারে কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ২৪ হাজার কিউসেক। কিন্তু জিকে সেচ চালু রাখতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ প্রয়োজন কমপক্ষে ৩৪ হাজার কিউসেক।

জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্ট হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। গত জানুয়ারি থেকে দুই দেশের যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রতি ১০ দিন অন্তর পানির পরিমাণ পর্যালোচনা করা হয়।

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, জিকের সেচ চালু রাখতে এবার তাদের একটু বেশিই হিমশিম খেতে হচ্ছে, কারণ এবার বৃষ্টির দুষ্প্রাপ্যতা ঘটেছে। বৃষ্টি হলে নদীতে পানিপ্রবাহটা অব্যাহত থাকে। এদিকে জিকের আওতায় সেচ নির্ভর কৃষকরা বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, কৃষকদের এখন পানি প্রয়োজন। তবে কোথাও কোথাও ধানে এখন আর পানি লাগছে না।

তবে সার্বিক বিবেচনায় কৃষকদের হাতের নাগালে পানি প্রয়োজন। জিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, আগামীকালই শেষ হচ্ছে ভারতের পানি প্রত্যাহার। হয়তো দুয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি উন্নতি হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন