ইস্পাত উৎপাদন

টানা ২৫ বছর ধরে তিন চ্যালেঞ্জে চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মধ্যেও গত বছর ইস্পাত উৎপাদনে বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে চীন। সময় প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের মাইলফলকে পৌঁছে দেশটি। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক মোট উৎপাদনে চীনের অবদান ছিল ৫৭ শতাংশ। তবে বড় অবদান রাখা সত্ত্বেও দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কার্বন নিঃসরণসহ তিন প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন। খবর হেলেনিক শিপিং নিউজ।

চীনা আয়রন অ্যান্ড স্টিল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের ১২তম বার্ষিক সভা গত মাসের শেষে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইস্পাত শিল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত বছর চীনে শিল্পের দ্রুতগতির বৃদ্ধি ছিল একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ আমাদের দেশের ইস্পাত শিল্প দীর্ষদিন ধরেই তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইস্পাত উৎপাদন ব্যবহারের ক্রমাগত বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জকে আরো কঠিন করে তুলছে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনা, কার্বন নিঃসর কমানো এবং নিরপাত্তা ব্যবস্থা আরো সুসংহত করা। তাদের মতে, বছরান্তে ইস্পাত উৎপাদনের কারণে চ্যালেঞ্জ মোকাকেলা করতে পারছে না চীন। কেবল উৎপাদন ইস্পাত ব্যবহার কমিয়ে আনার মাধ্যমেই এর মোকাবেলা সম্ভব।

ধাতু উপকরণগুলোর মধ্যে বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহার হয় ইস্পাত। বিভিন্ন জিনিসপত্র মেরামতেও ধাতুপণ্যটির ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেক সময় কোনো দেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের প্রতিনিধিত্ব করে ইস্পাত। 

ওয়ার্ল্ড আয়রন অ্যান্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জু ইয়ং বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন চীনের ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ১০ কোটি টন ছাড়িয়ে যায়, তখন থেকেই ধাতুপণ্যটির শীর্ষ উৎপাদক দেশের তালিকায় নাম লেখায় চীন। ২৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অবস্থান ধরে রেখেছে দেশটি। বিশেষভাবে গত ১০ বছরে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকের বেশির অংশীদার চীন। সে কারণে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনেও চীনের অবস্থান সবার শীর্ষে।

চীনা আয়রন অ্যান্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে বছরান্তরে চীনের অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ কোটি ৫০ লাখ টনে। অন্যদিকে পরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১০ শতাংশ বেড়ে ১৩২ কোটি ৫০ লাখ টনে দাঁড়ায়। একই সময়ে চীনে অপরিশোধিত ইস্পাতের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির পরিমাণ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ডে পৌঁছে। এক বছরে ইস্পাত থেকে দেশটির আয় দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ৭৪০ কোটি ইউয়ানে (চীনের মুদ্রা) পৌঁছে।

অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান লুও তিজুন অকপটে স্বীকার করে বলেন, ইস্পাত শিল্পের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কেবল সরবরাহগত দিকের সংস্করণের ফল মাত্র। এছাড়া করোনা মহামারীর প্রভাবে জাতীয় সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিব্যবস্থা ফল ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতি। তবে একটি বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে গত বছরের উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ছিল একেবারেই অস্বাভাবিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎপাদনের ক্রমবৃদ্ধি ইস্পাতের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। নয়তো চাহিদা জোগানের ভারসাম্যহীনতা এবং ইস্পাত শিল্পে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগের ফলে কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে সম্পদ জীবনের সুরক্ষায় সমস্যা আরো বাড়বে। 

বিশ্লেষকরা বলেন, বর্তমানে ইস্পাত উৎপাদন কমিয়ে আনা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আরো অধ্যয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজন, যাতে তারা নিশ্চিতভাবে ২০২১ সালের মধ্যেই ধাতুপণ্যটির উৎপাদন কমিয়ে আনতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার পর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারবে চীন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন