কয়লা নির্ভরতায় বিপর্যয়ের শঙ্কা

বিশ্বে চলতি বছর কার্বন নির্গমন বাড়বে ১৫০ কোটি টন

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারীতে তীব্র সংকোচনের পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা, ঋণের রেকর্ড নিম্ন সুদহার ব্যবসায় কর ছাড়ের মতো বিষয়গুলো আশা দেখাচ্ছে। ফলে চলতি বছরই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সতর্কতার কথাও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কয়লা নির্ভরতায় বেশি জোর দেয়া হয়েছে। ফলে চলতি বছর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বিপজ্জনকভাবে বাড়বে। খবর সিএনএন।

আইইএর প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, ২০২১ সালে জ্বালানি ব্যবহার থেকে কার্বন নির্গমন বাড়বে ১৫০ কোটি টন। আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে এশিয়া বিশেষত চীনে ব্যাপক আকারে কয়লা ব্যবহার। এটা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত বৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে যাবে। জ্বালানি সম্পর্কিত বার্ষিক নির্গমন বৃদ্ধির ইতিহাসে হার দ্বিতীয় বৃহত্তম।

আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি একটি ভয়াবহ সতর্কতা যে মহামারী সংকট থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি আমাদের জলবায়ুর জন্য টেকসই নয়। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো যদি নির্গমন কমানো শুরু করতে দ্রুত অগ্রসর না হয়, তবে আমরা ২০২২ সালে আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি।

চলতি সপ্তাহের শেষে জলবায়ু সংকট নিয়ে দুদিনের শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৪০ জন শীর্ষ নেতার সম্মেলনের আগমুহূর্তে প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। ফাতিহ বিরোল এটিকে পরিষ্কার তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য একটি জটিল মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর বিশ্বজুড়ে লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। ঘরবন্দি থাকার সময়ে বন্ধ ছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রমও। জ্বালানি সম্পর্কিত কার্যক্রম হ্রাস পাওয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমনও নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী হয়েছিলেন, মহামারী হয়তো নির্গমন হ্রাসকে ত্বরান্বিত করছে। তবে নতুন পূর্বাভাস সেই আশাকে স্বল্পকালীন হিসেবে চিহ্নিত করছে।

আইইএ অনুমান করছে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক জ্বালানির চাহিদা দশমিক শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এটা ২০১৯ সালের স্তরকেও ছাড়িয়ে যাবে। উন্নয়নশীল অর্থনীতি উদীয়মান বাজারগুলোয় জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ছে। জ্বালানি সম্পর্কিত নির্গমন ২০১৯ সালে যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, বছরের শেষে তার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও গত বছর নির্গমন ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। কয়লা ব্যবহারে পুনরুত্থান একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর কয়লার চাহিদা ২০১৪ সালের রেকর্ড শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে কয়লার চাহিদা বৃদ্ধির ৫০ শতাংশই চীনের। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপেও কয়লার ব্যবহার বাড়ছে। যদিও সেটা সংকটপূর্ব স্তরের নিচে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস উন্নত দেশগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করা এবং নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে বৈদ্যুতিক চাহিদা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এত আশঙ্কার মধ্যেও আশাবাদী হওয়ার মতো খবরও রয়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে। আর এর বড় অংশ আসবে চীনের ক্রমবর্ধমান সৌর বায়ুশক্তি থেকে।

আইইএর পূর্বাভাসে কিছু অস্পষ্টতাও রয়ে গেছে। কভিড-১৯-এর সংক্রমণ টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে নির্গমনের হিসাবে কম-বেশি হতে পারে। যেমন প্রত্যাশার তুলনায় ভ্রমণ যদি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়, তবে জ্বালানির চাহিদা আরো বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন