ডিএইর ১১ নির্দেশনা

দাবদাহ ও শিলাবৃষ্টির পর এবার বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। তবে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তত্সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ত্রিপুরা অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। চলতি মাসের শেষভাগে ভারি বর্ষণের কারণে আসতে পারে বন্যা। আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া সতর্কবাণী অনুযায়ী কৃষকদের জন্য ১১ দফা পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)

উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে বলে সতর্কবাণী দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা পর্যবেক্ষণে গতকাল থেকে মনিটরিং সেলও খুলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রণাধীন বন্যা পর্যবেক্ষণ সংস্থা। এজন্য ১১ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএই। ডিএইর ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্ব হাওর অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নেত্রকোনার কিছু জায়গায় ভারি বৃৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। তাই বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে বিশেষ পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের দেয়া পরামর্শের মধ্যে রয়েছে বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই দ্রুত সংগ্রহ করে শুকনো জায়গায় রাখা। দ্রুত পরিপক্ব সবজি সংগ্রহ করা, গবাদি পশু হাঁস-মুরগি উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেয়া, জরুরি খাদ্য অন্যান্য সামগ্রী উঁচু এলাকায় স্থানান্তরের জন্য নৌকার ব্যবস্থা রাখা এবং ফসলের জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে দ্রুত সরিয়ে দেয়া। এছাড়া পানি নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখা, যাতে দ্রুত পানি সরে যেতে পারে, জমির আইল উঁচু করে দেয়া, জমিতে এখন কোনোভাবে সেচ, সার বা বালাইনাশক ব্যবহার না করা, একান্ত প্রয়োজন হলে বৃষ্টির পর সার বা বালাইনাশক ব্যবহার করা, কলাসহ অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করা, গবাদি পশু হাঁস-মুরগি উঁচু জায়গায় রাখা এবং পুকুরের পাড় উঁচু করে দেয়া, জাল অথবা বাঁশের বেড়া দিয়ে মত্স্যসম্পদ রক্ষা করা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রায় ৩৬ জেলায় বয়ে যায় হিট শক বা গরম বাতাস। এছাড়া শিলাবৃষ্টি আঘাত হেনেছে বেশ কয়েকটি জেলায়। হিট শক শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার হেক্টর জমির ধান। এর মধ্যে ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। সেখান থেকে এক লাখ টন চাল আসতে পারত। বাকি জমিগুলোর ধান বিভিন্ন মাত্রায় বিশেষ করে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, করোনাকালে নতুন সংকটে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। দেশের কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা বা হিট শক। শিলাবৃষ্টি গরম বাতাসদুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাল উৎপাদন কম হলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে চালের দাম কয়েক মাস ধরেই উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। সরবরাহ পরিস্থিতি বাড়াতে এরই মধ্যে সরকারিভাবে চাল আমদানি করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডিএই বলছে, চলতি বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লাখ ২৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে হয়েছে। ফলে বোরোর আবাদ দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হাইব্রিড আবাদ বাড়ানো হয় প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমিতে। ফলে শিলাবৃষ্টি হিট শকে লক্ষ্যমাত্রা থেকে চাল উৎপাদন খুব বেশি কম হবে না। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে কৃষকদের কী ধরনের সহায়তা দরকার এবং বিকল্প উপায়ে কীভাবে আবাদ ধরে রাখা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন