হিট শকের প্রভাব

দুই জেলায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমির ধান চিটা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, পাবনা ও ময়মনসিংহ

পাবনার চাটমোহর ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় হিট শকে চিটায় পরিণত হয়েছে সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। এর মধ্যে চাটমোহরে ছয় হাজার ময়মনসিংহে হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় আছেন দুই জেলার কৃষক।

চলতি মাসের শুরুর দিকে পাবনার চাটমোহরে হিট শকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো ধান। কয়েক মিনিটের গরম হাওয়ায় ধীরে ধীরে ধান চিটা হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাটমোহরের কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির ধান হিট শকে আক্রান্ত হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখনো ক্ষতিগ্রস্ত জমির ধানের ৮০ ভাগ রক্ষা করা সম্ভব।

কাতুলী গ্রামের কৃষক মানু সেখ বলেন, দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছিলাম। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। কিন্তু ধান যেভাবে চিটা হয়েছে, তাতে অর্ধেক খরচও উঠে আসবে না।

একই গ্রামের কৃষক দিলবার, আব্দুর রশিদ, রবিউল ইসলাম রবি জানান, কমবেশি সবাই তিন থেকে সাত বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। তারাও বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

তাদের দাবি, বর্তমানে যে পরামর্শ কৃষি দপ্তর দিচ্ছে, পরামর্শ আরো আগে দিলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেত তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুমবিল্লাহ বলেন, মূলত ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার বাতাসের কারণে ধানের এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে জমিতে ইঞ্চি পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখা পরিমাণ মতো পটাশ সার স্প্রে করলে উপকার পাবেন কৃষক। এতে ৮০ ভাগ ধান চিটার কবল থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করি।

চলতি বছর চাটমোহর উপজেলায় হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ টন চাল উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফলনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম হাওয়ায় আনুমানিক হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হতে না হতেই আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে গলাপচা রোগ। জেলায় কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে জেলার ১৩টি উপজেলায় মাত্র কয়েক মিনিটের গরম বাতাস বা হিট শকে বিস্তীর্ণ এলাকার জমির বোরো ধানের শীষ চিটায় পরিণত হয়। এখন নতুন করে ময়মনসিংহের কয়েকটি উপজেলায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ভালুকা, ত্রিশাল, গৌরীপুর, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ সদর হালুয়াঘাট উপজেলায় রোগের প্রাদুভার্বের খবর পাওয়া গেছে। কৃষি অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না কৃষকরা।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ জেলায় লাখ ৬১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। গরম বাতাস বা হিট শকে জেলার হাজার ২০১ হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হলেও হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির ধানের শীষ সম্পূর্ণ চিটায় পরিণত হয় এবং ৬৩ হাজার ৩৩৮ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো দেখা দিয়ে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব।

গৌরীপুর উপজেলার ইউসুফাবাদ, সাতুতি, গাঁওগৌরীপুর, শালীহর, চান্দেরসাটিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় এখন বোরো ধানে নতুন করে পাতাপোড়া, গলাপচা বা ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুত্ফুন নাহার জানান, গরম বাতাসে উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে কিছু এলাকায় ব্যাকটেরিয়া লিফ ব্রাইট (বিএলবি) বা পাতাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় এবং ত্রিশাল, ভালুকা, ফুলবাড়ীয়া হালুয়াঘাট উপজেলায় রোগের দেখা মিলেছে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তাহমিনা জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৌসুমি গরম বায়ু প্রবাহের ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন কিছু এলাকায় ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। তা খুবই অল্প পরিমাণ। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেন ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।

ত্রিশাল উপজেলা কৃষি অফিসার শোয়েব আহমেদ জানান, আমরা অল্প কিছু এলাকায় ব্লাস্ট সংক্রমণের খবর পেয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ায় তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। এতে খুব বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাসুদুর রহমান জানান, দিনে গরম আর রাতে ঠাণ্ডার কারণে ব্লাস্টের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। তিনি কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ ন্যাটিভো-৭৫ ডব্লিউ জি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে উপকার পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, হিট শকে ধানের ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর পেয়েছি। কিন্তু এখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কিংবা জমির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, গরম বাতাসে ধানের ক্ষতি হয়েছে। তার পরও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ব্লাস্ট রোগের কারণে যে কয়েকটি উপজেলা থেকে খবর এসেছে, তার পরিমাণ খুবই কম। কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে প্রতিষেধক ব্যবহারের জন্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন