ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশছে রাসায়নিক

সুপেয় পানির সংকটে বেলকুচির বাসিন্দারা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বেলকুচি

সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ উপজেলা বেলকুচিতে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার তাঁত শিল্প কারখানাগুলো থেকে নির্গত রাসায়নিক মিশছে পানির ভূগর্ভস্থ স্তরে। নলকূপের মাধ্যমে এসব পানি উঠে আসছে। ফলে দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় তাঁত শিল্পের কাঁচামাল সুতা, রঙসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে খাল-বিল যমুনা নদীতে। পানি ভূগর্ভের স্তরে মিশে যাচ্ছে নলকূপগুলোয়। ফলে নলকূপের পানিতে সাবানের মতো ফেনা হচ্ছে এবং মরিচা রঙের পানি বের হচ্ছে, যা ব্যবহার পানের অনুপযোগী। স্থানীয়রা বাধ্য হয়েই পানি ব্যবহার করছে।

বেলকুচি উপজেলা প্রসেস মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শুধু বেলকুচি পৌরসভাতেই সমিতিভুক্ত সুতা প্রসেস মিল রয়েছে ১৬টি। এর বাইরে ফিরোজা রঙের মিল, তাঁতিদের প্রায় সব বাড়িতে সুতা রঙের ডায়িং কারখানা, কেমিক্যাল ব্যবহূত ছোট বড় কারখানা রয়েছে। এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩০-৪০টির মতো রয়েছে সুতা প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান। ডায়িং রয়েছে পাঁচশতাধিক। ২৫টির মতো রয়েছে ফিরোজা রঙের মিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলকুচির তামাই গ্রামের নতুন পাড়ার বেশির ভাগ বাসিন্দা নলকূপের পানি পান করতে পারছে না। পাইপের সাহায্যে দূর থেকে পানি বয়ে আনতে হয়। যারা একটু সচ্ছল তারা বোতলজাত পানি ক্রয় করে পান করছে। এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তামাই গ্রামের মুন্সী ব্রাদার্স প্রসেস কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি এখন গোপনে ঘরের মধ্যে বিদ্যুত্চালিত পাম্প বসিয়ে মাটির নিচে দেয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জহুরুল হক জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। দেশের তাঁত শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে এখনই সময় এসেছে পরিকল্পনা করার। এক্ষেত্রে গুরুত্বসহকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে।

মুন্সী ব্রাদার্স প্রসেস কারখানার স্বত্বাধিকারী শওকত মুন্সী বলেন, আমরা বর্জ্য মাটির নিচে দিই না, নিজস্ব খালের মধ্যে ফেলি। আসলে এভাবেও বর্জ্য ফেলতে চাই না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে আমরাও সহায়তা করব।

বেলকুচি প্রসেস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, সব প্রসেস মিলকে একত্রিত করে একই অঞ্চলে নিয়ে একটি ইটিপি প্লান্ট তৈরির প্রস্তাবনা আমরা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারকে দিয়েছি। বাস্তবায়ন হলে সমস্যার সমাধান হবে।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুুর রহমান বলেন, যেহেতু এটি তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা, সেহেতু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না হলে অবস্থার সৃষ্টি হতেই পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বগুড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আশরাফুজ্জামান বলেন, আমাদের জনবল কম। তাই ইচ্ছা থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসককে জানাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন