অভিমত

বাংলাদেশে সুকুক: আর্থিক বাজারে নয়া যুগের হাতছানি

মো. গোলজারে নবী

২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম বিনিয়োগ সুকুক ইস্যুর ফলে বাংলাদেশের আর্থিক বাজার রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। তারল্য ব্যবস্থাপনা  এবং বাজেট ঘাটতি অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থায়নের টেকসই বিকল্প হিসেবে ইসলামী শরিয়াহর আলোকে গঠিত সমমূল্যের বিনিয়োগ সার্টিফিকেট সুকুক বিশ্বব্যাপী মুসলিম অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় দেশগুলোয় বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো প্রকল্প অর্থায়নে ব্যাপক হারে সুকুক ব্যবহার করে। ইসলামিক আর্থিক সেবা শিল্প স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২০ আইএফএসবি, মালয়েশিয়ার উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক সুকুক স্থিতির পরিমাণ ৫৪৩ দশমিক বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রচলিত উৎসগুলো থেকে প্রাপ্ত তহবিল অপর্যাপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং বাজেট ঘাটতি অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থায়নের টেকসই বিকল্প হিসেবে প্রচলিত তহবিলের পাশাপাশি সুকুক ব্যবহার করতে পারে। উদ্দেশ্যে আইনগত স্বচ্ছতা সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকারি বেসরকারি খাতের জন্য পৃথক সুকুক গাইডলাইন/রুলস ইস্যু করা হয়েছে। 

দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শরিয়াহ-ভিত্তিক অর্থায়নের পথ সম্প্রসারণ সুগম করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক ইস্যুর নীতিমালার আলোকে সুকুক ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ইসলামিক সিকিউরিটিজ সেকশন-কে স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ সুকুক ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে অর্থায়নের নিমিত্তে সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রথম ধাপে বার্ষিক দশমিক ৬৯ শতাংশ মুনাফা হারে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুকের (ইজারা সুকুক) হাজার কোটি টাকার অকশন ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে বিনিয়োগকারীরা মোট ১৫ হাজার ১৫৩ দশমিক ১০ কোটি টাকার বিড দাখিল করেন। চাহিদাকৃত পরিমাণের চেয়ে অকশনে দাখিলকৃত বিডের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের তাদের বিডের বিপরীতে আনুপাতিক হারে সুকুক বরাদ্দ দেয়া হয়। চাহিদার তুলনায় অকশনে দাখিলকৃত বিডের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেশি হওয়ায় এটি ইসলামী শরিয়াহ-ভিত্তিক বিনিয়োগ সার্টিফিকেট সুকুকের বিপুল জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে। আলোচ্য সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক সরকারের উন্নয়ন অর্থায়ন খাতে একটি নবদিগন্তের সূচনা হলো।

সুকুক আরবি শব্দ, যা সাক্ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ প্রাপ্য সম্পদের স্বীকৃতিপত্র বা কোনো কিছুর মালিকানায় অধিকারের সনদ বা দলিল। ইসলামের ইতিহাসে সোনালি মধ্যযুগে আর্থিক বাণিজ্যিক লেনদেনে সুকুকের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ মুসলিম দেশে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দেশগুলোর শাসন শুরু হলে সুকুকসহ অন্যান্য ইসলামী আর্থিক বাণিজ্যিক অর্থায়নের হাতিয়ারগুলোর ব্যবহার ধীরে ধীরে হ্রাস বা বিলুপ্ত হতে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে মুসলিম দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন শুরু করলে মুসলিম চিন্তাবিদরা ইসলামী শরিয়াহসম্মত আর্থিক বাণিজ্যিক অর্থায়নের হাতিয়ারগুলো ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৩ সালে মিসরে প্রথম ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলো সৌদি আরবের জেদ্দা নগরীতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলে দেশে দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জোয়ার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের যাত্রা হয়। ১৯৯০-এর দশকে সুদভিত্তিক বন্ডের বিকল্প হিসেবে ইসলামী শরিয়াহর আলোকে আর্থিক বাণিজ্যিক অর্থায়নের হাতিয়ার হিসেবে সুকুকের ব্যবহার শুরু হয় এবং বর্তমানে তা মুসলিম অমুসলিম উভয় দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক গাইডলাইন ২০২০ অনুযায়ী, সুকুক অর্থ সমমূল্যের অনুমোদিত সম্পত্তি-নিদর্শনপত্র, যা কোনো শরিয়াহসম্মত বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট প্রকল্পের অথবা বিশেষ বিনিয়োগের বা কোনো পরিষেবার বিদ্যমান সম্পদের (tangible assets, usufruct এবং services) ওপর অথবা/এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন বা প্রস্তুতের মাধ্যমে ওই চুক্তির অধীনে অন্তর্ভুক্ত হবে এরূপ সম্পদের ওপর অথবা/এবং ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে ক্রয় করা হবে বা এরই মধ্যে ক্রয় করা হয়েছে এমন কোনো শরিয়াহসম্মত পণ্যদ্রব্যের ওপর অবিভক্ত মালিকানা অথবা অংশীদারিত্ব নির্দেশ করবে।

শরিয়াহসম্মত চুক্তি অনুযায়ী সুকুক চার প্রকার হতে পারে। () অংশীদারি পদ্ধতির সুকুক, যেমন মুশারাকা মুদারাবা সুকুক; () ইজারা পদ্ধতির সুকুক; () ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতির সুকুক, যেমন মুরাবাহা সুকুক, ইসতিসনা সুকুক সালাম সুকুক এবং () এজেন্সি-ভিত্তিক সুকুক, যেমন ওকালা সুকুক। একাধিক পদ্ধতির সুকুক নিয়ে মিশ্র সুকুকও গঠন করা হয়, যা হাইব্রিড সুকুক নামে পরিচিত। ইস্যুকারীরা প্রধানত বাস্তব চাহিদা, মেয়াদ প্রাপ্ত অন্তর্নিহিত সম্পদের আলোকে সুকুকের একটি শ্রেণী নির্বাচন করে থাকেন। উল্লেখ্য, সাধারণত প্রকল্প অর্থায়নে ইজারা অংশীদারি পদ্ধতির সুকুক এবং স্বল্পমেয়াদি তারল্য ব্যবস্থাপনায় ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতির সুকুক ব্যবহার করা হয়।

অন্তর্নিহিত সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে সুকুক দুই প্রকার হতে পারে। যেমন অ্যাসেট ব্যাকড সুকুক এবং অ্যাসেট বেজড সুকুক। স্পেশাল পারপাস ভেহিকলের (এসপিভি) কাছে অন্তর্নিহিত সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করে সুকুক ইস্যু করা হলে অ্যাসেট ব্যাকড সুকুক এবং এসপিভির কাছে অন্তর্নিহিত সম্পদের মালিকানা নয়, বরং অন্তর্নিহিত সম্পদ থেকে আহরিত আয়ের মালিকানা হস্তান্তর করে সুকুক ইস্যু করা হলে অ্যাসেট বেজড সুকুক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

প্রচলিত সুদভিত্তিক বন্ড সুকুকের মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য

প্রচলিত সুদভিত্তিক বন্ড সুকুকের মধ্যে মূল সাদৃশ্য হলো, উভয়ই আর্থিক হাতিয়ার হিসেবে বাজার তথা জনসাধারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল আহরণের মাধ্যমে উন্নয়ন, শিল্প বাণিজ্যিক অর্থায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তবে উভয়ের মধ্যে নীতি, প্রায়োগিক মূল্যনির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ইসলামী শরিয়াহতে সুদ আরোপে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সুকুক সুদ পরিহার করে ইসলামী নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ইস্যু করা হয়। প্রচলিত বন্ড হচ্ছে একটি ঋণভিত্তিক আর্থিক হাতিয়ার, যাতে নির্দিষ্ট বা ফ্লোটিং সুদহারে মুনাফা প্রদানের জন্য একটি চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা থাকে। এটি মালিকানাভিত্তিক আর্থিক হাতিয়ার, যাতে কোনো সুদের উপার্জন বা ঋণের বাধ্যবাধকতা থাকে না। প্রচলিত বন্ড হোল্ডাররা পূর্বনির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট হারে লাভ মূলধন ফেরত পেয়ে থাকেন। যদি ইস্যুকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে ধরনের বন্ড হোল্ডার কোনো ক্ষতি বহন করেন না। বিপরীতভাবে, সুকুক হোল্ডাররা অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তির মালিকানা এবং অন্তর্নিহিত বস্তুগত বা বস্তুগত সম্পত্তি (অংশীদারিত্ব, ইজারা বা বিক্রয়) থেকে আহরিত লাভের অধিকার পেয়ে থাকেন এবং যদি কোনো ক্ষতিও হয়, তারা তা বহন করে থাকেন। প্রচলিত বন্ড যেকোনো সম্পদ, ব্যবসা বা প্রকল্পে দেশের আইন অনুসারে বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু সুকুক শুধু সেসব সম্পদ, ব্যবসা বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে, যেগুলো ইসলামিক শরিয়াহ এবং দেশের আইন উভয়ই অনুসরণ করতে হয়।

সুকুকের ঝুঁকিগুলো

প্রচলিত বন্ডের ন্যায় সুকুকের বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। সুকুক প্রচলিত বন্ডের ন্যায় যে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে, সেগুলো হলো সুকুক মূল্য ওঠানামাজনিত ঝুঁকি, প্রকৃত সম্পদের বাজারমূল্যজনিত ঝুঁকি, মুনাফার ঝুঁকি মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি। সুকুক প্রচলিত বন্ডের ন্যায় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ব্যতীত যে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে, তা হলো শরিয়াহ পরিপালন ঘাটতিজনিত ঝুঁকি। তবে সুকুক যেহেতু প্রকৃত অন্তর্নিহিত সম্পদের বিপরীতে শরিয়াহ পরিপালন সাপেক্ষে  ইস্যু করা হয়, প্রচলিত বন্ডের তুলনায় এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ অধিকতর স্থিতিশীল।

সুকুকের বৈশ্বিক অবস্থা

কম ঝুঁকিপূর্ণ অধিকতর স্থিতিশীল হওয়ার কারণে অর্থায়নের টেকসই বিকল্প হিসেবে সুকুক বিশ্বব্যাপী মুসলিম অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় দেশগুলোর সরকারি বেসরকারি খাতে বাজেট ঘাটতি তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প অর্থায়নে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক সুকুক স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪৩ দশমিক বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে সরকারি খাত, বেসরকারি খাত বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের অবদান যথাক্রমে ৫৬ শতাংশ৩৬ শতাংশ শতাংশ। বৈশ্বিক সুকুক বাজারে মালয়েশিয়ার অবদান সর্বোচ্চ (৩৬.%) সুকুক ইস্যুকারী অন্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব (১৪%), ইন্দোনেশিয়া (১৪.%), তুরস্ক (.%), কুয়েত (.%),  আরব আমিরাত (.%), ইরান (.%), কাতার (.%) বাহরাইন (.%) অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যেসব দেশ সুকুক ইস্যু করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুর উল্লেখযোগ্য। সুকুক ইস্যুকারী বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক আইএফসি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুকুকের গুরুত্ব

একটি শক্তিশালী সুকুক বাজার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রথমত, সুকুক সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটি শরিয়াহভিত্তিক মুদ্রানীতির হাতিয়ার হতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিধায় সুকুক শরিয়াহ-ভিত্তিক মুদ্রানীতির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। তৃতীয়ত, ইসলামী ব্যাংকগুলো মূলধন কাঠামো সুসংহতকরণ তহবিল সংগ্রহে সুকুক ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুকুককে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ (এসএলআর) হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সুদভিত্তিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়েও সুকুকে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। চতুর্থত, সুকুক অবকাঠামো শিল্প উন্নয়ন অর্থায়নে ভূমিকা পালন, বৈদেশিক  ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। পঞ্চমত, দেশের আধা সরকারি পৌর করপোরেশনগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে সুকুক ইস্যু করতে পারে। ষষ্ঠত, সরকার, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সুসংগঠিত এনজিওগুলো সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের জন্য সামাজিক সুকুক ব্যবহার করতে পারে। সপ্তমত, পরিবেশ সংকট ব্যবস্থাপনায় সবুজ সুকুক অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুকুকের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুকুকের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক সাফল্য, ইসলামী ব্যাংকগুলোর আড়াই কোটির অধিক গ্রাহক অতিরিক্ত তারল্য, সুকুকের জন্য আইনি কাঠামো/গাইডলাইনস ইস্যু, অবকাঠামো শিল্প উন্নয়ন অর্থায়নের বিপুল চাহিদা এবং দেশে বিরাজমান স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ সুকুকের ব্যাপক সম্ভাবনার ইঙ্গিত প্রদান করে।

বাংলাদেশে সুকুকের সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতাগুলো

সুকুক বিষয়ে প্রচারণা ধারণার অভাব, কর প্রণোদনার অনুপস্থিতি, সুকুক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি এবং পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শরিয়াহ উপদেষ্টার অভাব বাংলাদেশে সুকুক বাজার উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।

সুকুকের বাজার উন্নয়নের দিকনির্দেশনা

সুকুক বাজার উন্নয়নে গৃহীতব্য ব্যবস্থাগুলো হলো সুকুক বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, কর ছাড়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ইসলামিক ফাইন্যান্স ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ডিপ্লোমা, স্নাতক স্নাতকোত্তর কোর্স চালু এবং পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শরিয়াহ উপদেষ্টা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইসলামী শিক্ষা বিভাগ ধর্মীয় উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইসলামিক আর্থিক বাণিজ্যিক কোর্স প্রবর্তন।

বর্তমান সরকারের শাসনামলে সরকারি খাতে প্রথম বিনিয়োগ সুকুক ইস্যু বাংলাদেশের আর্থিক বাজার রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করবে, যা দেশের আর্থিক খাত তথা অর্থনীতিতে Paradigm shift-এর জন্য অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা, পরিবর্তন বাংলাদেশের আর্থিক বাজার রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সুদভিত্তিক ঋণনির্ভর ব্যবস্থা থেকে মুনাফাভিত্তিক ইকুইটি-নির্ভর ব্যবস্থায় রূপান্তরে সহায়তা করবে। ফলে বাংলাদেশের আর্থিক বাজার রাজস্ব ব্যবস্থা অধিকতর অংশীদারিত্বমূলক, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক জনকল্যাণমুখী হবে। শক্তিশালী সুকুক বাজারের পরিপূর্ণ সুফল পেতে দরকার এর উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলো দূরীকরণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

(প্রবন্ধে বর্ণিত মতামত প্রবন্ধকারের একান্ত ব্যক্তিগত; এতে তার অফিশিয়াল অবস্থানের কোনো সম্পর্ক নেই)

 

মো. গোলজারে নবী: বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন