কভিড-১৯ মহামারী

পুনরুদ্ধারের পরও গভীর ক্ষত থাকবে বিশ্ব অর্থনীতিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। জ্বর, দুর্বলতা থেকে শুরু করে স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার মতো দীর্ঘ লক্ষণ থেকে যাচ্ছে কারো কারো। একই ধরনের পরিস্থিতি অর্থনীতির ক্ষেত্রেও দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, মহামারীর প্রভাবে গভীর সংকোচনের পর অর্থনীতি চলতি বছরই পুনরুদ্ধার হবে। এরপরও বিশ্ব অর্থনীতি বিবর্ণ থেকে যাবে। খবর ব্লুমবার্গ। 

অর্থনীতিবিদদের মতে, ২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা এবং টিকাদান কার্যক্রমের ফলে প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। তবে স্তব্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা, রেকর্ড নিম্ন কর্মসংস্থান, যুদ্ধ যুগের ঋণের স্তর এবং বর্ণ, লিঙ্গ, প্রজন্ম ভৌগোলিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে তীব্র বৈষম্য রেখে যাবে মহামারী। আর এগুলো প্রকট আকার ধারণ করবে অনুন্নত দেশগুলোয়।

কভিড-১৯ মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেলোর আর্থি। তিনি বলেন, একটি সংকটজনক বছর কিংবা সময় পরে স্বস্তি বোধ করা খুব সহজ। তবে আমরা ঐতিহাসিকভাবে যে প্রভাবগুলো দেখি, তা প্রায়ই কয়েক দশক ধরে থাকে এবং সেগুলো সহজে সমাধান করা যায় না।

মহামারীর প্রভাবে গত বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সংকোচন ছিল ১৯৩০-এর দশকের অতিমন্দার পরে বৃহত্তম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী, ব্যয় ২৫ কোটি ৫০ লাখ লোকের পূর্ণকালীন চাকরির সমান। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশকের পর ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংকুচিত হয়েছে।

মহামারীর প্রভাবও দেশভেদে ভিন্ন। ১৬২টি দেশের ৩১টি সূচক পর্যালোচনা করেছে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস লিমিটেড। তাদের পর্যালোচনায় গভীর দীর্ঘ ক্ষতের ক্ষেত্রে ফিলিপাইন, পেরু, কলম্বিয়া স্পেন সবচেয়ে দুর্বল অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নরওয়ে, জার্মানি সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারম্যান রেইনহার্ট বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি প্রাক-কভিড স্তরে ফিরে আসতে সময় লাগবে। অনেক দেশই কভিডের প্রভাব থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবে না। দেশগুলো সেখান থেকে অনেক দূরে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসেও কভিডের অসমান প্রভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। উন্নত অর্থনীতিগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহিন্ত হয়েছে। এটা ২০০৯ সালের মন্দার সম্পূর্ণ বিপরীত। সে সময় ধনী দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনার কারণে আগামী বছর মার্কিন অর্থনীতি করোনাভাইরাসের আগের পূর্বাভাসের চেয়েও বড় হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোয় খুব সামান্যই কভিড-১৯-এর ক্ষত থাকবে।

সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া না হলে বৈশ্বিক বৃদ্ধি হতাশার দশকে পরিণত হবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। জানুয়ারির প্রতিবেদনে সংস্থাটি বৈশ্বিক উৎপাদন ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাক-মহামারীর স্তরের চেয়ে শতাংশ কম হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল। আরথিসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির পশ্চাদগমন রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক নীতি, যা ব্যবসায়ে উদ্ভাবন বিনিয়োগের জন্য ভালো ক্ষেত্র তৈরি করা একটি উপায় হতে পারে। এরই মধ্যে বেশকিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার প্রণোদনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইতিহাস দেখায় নির্দিষ্ট মন্দার পাঁচ বছর পর দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির প্রত্যাশা সাধারণত দশমিক শতাংশ কম থাকে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) হিসাব অনুযায়ী, মহামারীর কারণে স্তব্ধ হয়ে থাকা শিক্ষা কার্যক্রম চার মাস বন্ধ থাকলেও তা শতাব্দীর অবশিষ্ট সময়ের জিডিপি কমিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দরিদ্র সংখ্যালঘু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনকালে শতাংশ কম আয় করবে। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছিল এবং এর ফলে মোট ঋণ ২৮১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মুডি অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডির মতে, বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে সংকট না থাকলেও সুদের হার বৃদ্ধি নিয়ে সরকার সংস্থাগুলো উভয়েই চাপের মুখে পড়বে। মহামারীর পর বিশ্বজুড়ে দ্রুত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে পুরো কর্মসংস্থান ফিরে আসতে বিশ্ব অর্থনীতি নিম্ন গিয়ারে আটকে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন