স্বাভাবিক জীবনের পথে হাঁটছে ইসরায়েল

বণিক বার্তা ডেস্ক

এক বছরেরও বেশি সময় পর মাস্কবিহীনভাবে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেল ইসরায়েলের মানুষ। দেশটির সরকার এক আদেশ জারি করে মাস্ক পরার ওপর বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। অবশ্য এর আগে ইসরায়েলের বেশির ভাগ মানুষকেই টিকার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এসব পদক্ষেপ মহামারীর পূর্বাবস্থা বা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে ইসরায়েলকে এক ধাপ এগিয়ে নিল।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খোলা জায়গায় বা রাস্তায় মাস্ক পরতে হবে না। কেবল আবদ্ধ পাবলিক প্লেস বা গণজমায়েতে মাস্ক পরতে হবে। তবে কারো নিজের বাসায় বা যেখানে বেশি মানুষ নেই, সেখানে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। সেজন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নাগরিকদের মাস্ক সঙ্গে রাখারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শুরুতেই ডে-কেয়ার থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে গতকাল থেকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ বন্ধের পর স্বাভাবিক স্কুলে ফিরতে একটি কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারো চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে বা ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে পুরো প্রক্রিয়াটি নজরদারির মধ্যে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। স্কুলগুলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যেমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শ্রেণীকক্ষে মাস্ক পরা, কক্ষগুলোতে যথাযথ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা বিরতির সময়ও প্রয়োজনীয় দূরত্ব মেনে চলা।

শিক্ষার্থীদের স্কুলের খোলা জায়গায় মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। এমনকি খাওয়ার সময় বা জিম ক্লাস করার সময়ও মাস্ক বাধ্যতামূলক নয়। যেহেতু শিশুরা টিকার আওতায় আসেনি, তাই তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সচেতন থাকতে শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া গত এক বছরের মানসিক, সামাজিক শিক্ষায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো শিক্ষার্থীকে একাকী বা দলগতভাবে শিক্ষা দেয়া যাবে। এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। কিন্তু এখন সবাইকে নিজের মতো করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।

স্কুল খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ইসরায়েল কিছু যুক্তি দেখিয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর কারণে গৃহবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মোটরনিউরন দক্ষতা শারীরিক কর্মদক্ষতা কমে গেছে। এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মিশেল গ্রিনস্টেইনের গবেষণা বলছে, প্রতি পাঁচজনে একজন শিশুর মধ্যে উত্কণ্ঠা বা অ্যাংজাইটির লক্ষণ দেখা গেছে। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট সমস্যার কারণে দেশটির মোট শিশুর অর্ধেকেরই মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য প্রয়োজন।

১৬ বছরের বেশি বয়সী বেশির ভাগ ইসরায়েলির শরীরে ফাইজার বা বায়োএনটেকের দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দেশটির হাসপাতালগুলোতে কমেছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা, প্রতিদিনই কমছে সংক্রমিতের সংখ্যাও।

মাস্ক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বিদেশীদের ইসরায়েলে প্রবেশ এখনো সীমিত। টিকা নেননি এমন ইসরায়েলিরা দেশে ফিরলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এর কারণ হলো বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকানো। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এরই মধ্যে সাতজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিশ্বে তারাই প্রথম এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে করোনাভাইরাস নির্মূল হয়ে গেছে এমন কথা বলা যাবে না, এটি আবার ফিরে আসতে পারে।

বিশ্বজুড়ে ৩০ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংখ্যা ইউক্রেনের কিয়েভ, ভেনিজুয়েলার কারাকাস বা পর্তুগালের লিসবন শহরের মোট জনসংখ্যার সমান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের মোট জনসংখ্যারও বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে টিকাদানের হার। তবু কোনোভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিল।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিন থেকে পৃথিবী যেন থমকে আছে। লকডাউন, এক শহর থেকে আরেক শহরে চলাচল বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শপিং মল বা বিলাসদ্রব্যের বাজারে মন্দা, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান কমে যাওয়াসহ কভিড-১৯ মহামারীর নানা রূপ দেখেছে বিশ্ব।

গোটা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে মরিয়া, ঠিক সেই সময়ে ইসরায়েল সাহসী সিদ্ধান্ত নিল। সংক্রমণ অসুস্থের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কম্বোডিয়ার দুটি বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল বা মিলনায়তনকে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে গতকাল লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। সময়ে মারা গেছেন অন্তত দেড় হাজার। সব মিলিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ ৭৭ হাজার ১৫০। এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। মহামারী শুরুর পর থেকে পর্যন্ত ব্রাজিলে মারা গেছেন লাখ ৭১ হাজার ৬৭৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রের পরই মৃতের সংখ্যায় এগিয়ে ব্রাজিল। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত বেড়ে চলেছে সংক্রমিত মৃতের সংখ্যা।

নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়া রোধে ভ্রমণকারীদের জন্য ১০ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্স। সপ্তাহে ব্রাজিল থেকে সব ধরনের উড়োজাহাজ যোগাযোগ বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। গতকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তুরস্কে ৬২ হাজার ৬০৬ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২২৮ জন। গত বছরের জুনের পর এবার প্রথম সংক্রমণ সর্বোচ্চ সংখ্যা ছুঁয়েছে পাকিস্তানে। গতকাল দেশটিতে একদিনে ১৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সময়ে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছিল হাজার ১২৭।

ইসরায়েল মাস্ক পরার ওপর যখন বিধিনিষেধ তুলে নিল, তখন অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সীমানা খুলে দিতে কোনো তাড়াহুড়ো করবে না তারা। দেশের মানুষও প্রায় করোনাভাইরাসমুক্ত জীবনযাপন করছে। গত বছরের মার্চ থেকেই তাদের সীমান্ত বন্ধ। কেবল বিভিন্ন দেশে থাকা অস্ট্রেলীয় নাগরিকরা দেশে ফিরতে পারছেন।

বাংলাদেশেও বাড়ছে শনাক্ত মৃতের সংখ্যা। এমন বাস্তবতায় চলতি মাসের তারিখ থেকে জনসাধারণের চলাচলে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন দেয়া হয়। কেবল জরুরি সেবা, ব্যাংক শিল্প-কারখানা ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন