বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে দ্বৈরথে টয়োটা-জিএম

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের সবচেয়ে সফল হাইব্রিড গাড়ি তৈরির জন্য টয়োটাকে পথিকৃৎ ধরা হয়। তবে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসঙ্গ চলে আসে, তখন এটা বলতেই হয় যে টয়োটাকে আরো কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য যোগ করতে হবে, বিশেষ করে চীনে।

দেশটিতে এখন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হং গুয়াং মিনি ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) চীনের সঙ্গে মিলে এটি যৌথভাবে তৈরি করেছে জেনারেল মোটরস (জিএম) এটির দাম হাজার ডলারের কম। ছোট, সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক গাড়িটি যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজারকে ধরে ফেলেছে, তখন টয়োটা নিজেদের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারেই ছাড়েনি।

আজ দ্য সাংহাই অটো শোতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা নিজেদের নতুন মডেলের গাড়ি উন্মোচন করবে। সাংহাই অটো শোকে বলা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রদর্শনের নতুন প্লাটফর্ম। আর সেখানেই টয়োটা দেখাবে তাদের নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি।

টয়োটার পরিকল্পনা হলো, প্লাটফর্মের মাধ্যমে তাদের নতুন মাঝারি আকারের স্পোর্টস ভেহিকল বা এসইউভি বাজারে আনবে তারা। যেটি কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিক্রি শুরু হবে। টয়োটার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এসব কথা জানিয়েছে রয়টার্স।

দীর্ঘদিন ধরেই টয়োটা কর্তৃপক্ষ একটি ছোট বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির চিন্তা করছিল। তবে সেটি না করে তারা বাজারে আনছে মাঝারি সাইজের এসইউভি। সেক্ষেত্রে এটা বলা যেতে পারে যে সম্ভবত ছোট গাড়ি তৈরি করতে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তারা। বিশেষ করে অল্প দামে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য আরামদায়ক ইভি তৈরি তাদের জন্য চ্যালেঞ্জেরই মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কার্বণ নিঃসরণ কমানোর একটি চাপ রয়েছে। এখন টয়োটা যদি ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করে তাহলে তাকে মিনি ইভি, টেসলার উচ্চমূল্যের সেডান, ভক্সওয়াগনের মাঝারি মানের মডেল, রেনাল্ট, চীনা স্টার্টআপগুলোর তৈরি ইভিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে।

টয়োটার প্রিয়াস হাইব্রিড গাড়ি গোটা বিশ্বে বেস্টসেলার হয়ে ওঠার পর তারা চেয়েছিল ছোট সাইজের ইভি তৈরি করবে। তবে সে সময় পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। ২০১২ সালে ১০০টির মতো ইকিউ বিক্রিও করে টয়োটা। তবে উচ্চমূল্য, বেশি পথ যেতে না পারার দুর্বলতা কম সময় চার্জ না থাকায় শেষ পর্যন্ত এটি বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হয়।

এখন টয়োটার জন্য মূল বিষয় হলো সাশ্রয়ী দামে ছোট আকারের ইভি তৈরি করা। আবার ছোট গাড়িতে বড় আকারের ব্যাটারি বসানোও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ টয়োটা মানের সঙ্গে আপস করতে চায় না। সে সঙ্গে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা গাড়ির পারফরম্যান্স যেন ঠিক থাকে, সেদিকেও নজর দিচ্ছে তারা। কিন্তু এসবের সঙ্গে তাদের এটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে যে গাড়ির দাম কম রাখতে হবে।

অন্যদিকে জিএম মোটরস চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উলিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করছে মিনি ইভি। দাম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিটি তারা বেশ ভালোই রপ্ত করেছে। অটোমোটিভ ফোরসাইটের হেড অব কনসালট্যান্সি ইয়েল ঝ্যাং বলেন, উলিং আসলে বাণিজ্যিক গাড়িগুলোতে গ্যাসোলিন ইঞ্জিন বদলে সাধারণ ইলেকট্রিক পাওয়ারট্রেন বসিয়ে দিয়েছে। তিনি প্রত্যাশা করছেন, চলতি বছর মিনি ইভির বিক্রি পাঁচ লাখ ছাড়াবে।

ওদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে বাজারে আরো অন্তত ১০ মডেলের মিনি ইভি আনবে উলিং। এর মধ্যে চারটি মডেল বাজারে ছাড়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে আছে। যদিও মিনি ইভির বেশকিছু সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। যেমন একটি এয়ার ব্যাগ থাকা, কন্ট্রোল টেকনোলজিতে স্থিতি না থাকা ইত্যাদি।

তবে এসবেরও জবাব দিয়েছে উলিং-জিএম। যৌথ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, এটি চীনের যতগুলো বাহন সুরক্ষার মানদণ্ড আছে, তার সবগুলো পূরণ করে। হং গুয়াং ইভি আদতে একটি যোগাযোগ সরঞ্জাম, এটি মানুষকে ব্যস্ত শহরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সহায়তা করে। এটি অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির মতো নয়।

গত জুলাইয়ে বাজারে আসার পর বিশেষত তরুণ চীনাদের কাছে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মিনি ইভি। ফলে দ্রুত এটি চীনের বেস্টসেলার কারে পরিণত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে গাড়িপ্রেমী সংশ্লিষ্টরা তাকিয়ে আছেন টয়োটার দিকে। তারা নতুন মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িতে কী কী বৈশিষ্ট্য যোগ করছে বা গাড়ি নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী, সেটিও অনেকের আগ্রহের বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন