বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তীব্র সংকটে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তিন শিফটে মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করায় মুমূর্ষু রোগীদের পাশে নার্স ব্যতীত কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৫৬ জন রোগী। মোট ১২টি আইসিইউ বেডের সবই রোগীতে পরিপূর্ণ। আরো অন্তত ২০ জন আছেন যাদের জরুরি আইসিইউ সেবা প্রয়োজন। কিন্তু আইসিইউ বেড না থাকায় তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউতে কোনো নির্ধারিত চিকিৎসক নেই। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ থেকে তিনজন চিকিৎসক সেখানে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম বলে জানান হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মনিরুজ্জামান। এ ওয়ার্ডে নেই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীও। এক্ষেত্রে রোগীদের সেবা দিতে বহিরাগত ২০ জন নারীকে রাখা হয়েছে।
গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর হাসপাতালের নবনির্মিত পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবনটিতে করোনা ওয়ার্ড করার পর চিকিৎসা কার্যক্রম ও অক্সিজেন সংকটের অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে অক্সিজেন সংকট না থাকলেও চিকিৎসক সংকট তীব্র।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, করোনা ওয়ার্ডের জন্য নতুন করে চিকিৎসক, নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে মূল হাসপাতালে যা জনবল রয়েছে, সেখান থেকেই চলছে করোনা ইউনিট।
এদিকে করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর হাসপাতালে রোগীদের ভিড় ছিল না বললেই চলে। তবে গত ৭ মার্চ নতুন করে করোনা রোগী ভর্তি হতে থাকে। গত শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ১৫৬ জন চিকিৎসাধীন। এ সময়ের মধ্যে আইসোলেশনে থাকা চারজন ও করোনায় আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে মোট ৩ হাজার ৭৭৫ জন ভর্তি হলেও ৫৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনার প্রকোপ দেখা দিলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন পাঁচতলা ভবনটিতে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই করোনা ইউনিট চালু হয়। প্রথম দিকে ২০ শয্যা দিয়ে যাত্রা হলেও ধীরে ধীরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। কিন্তু করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে দেড়শরও বেশি রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালটিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে অক্সিজেন ও আইসিইউ সেবার।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ শয্যা ও সাধারণ শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে ৫০টি সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আরো ১০টি আইসিইউ বেড বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আরো ১০টি আইসিইউ শয্যা পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।